চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন বাড়ল আরো ৭ দিন

103

চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়তে থাকায় চলমান লকডাউনের সময়সীমা আরো ৭ দিন বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বর্ধিত লকডাউন জেলাজুড়ে কার্যকর হয়েছে। চলবে আগামী ৭ জুন পর্যন্ত। লকডাউন কার্যকরে আগের বিধিনিষেধ বজায় থাকবে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ এই লকডাউন ঘোষণা করেন। করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক সভা শেষে তিনি এই ঘোষণা দেন।

এর আগে গত ২৪ মে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। যার শেষ দিন ছিল আজ। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে লকডাউনের সময়সীমা আরো ৭ দিন বাড়ানো হলো।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব, সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাকিউল ইসলাম, সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. জাহাঙ্গীর কবিরসহ করোনা প্রতিরোধ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ পর্যন্ত ৩২ জন নারী-পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া গত রবিবার ৬৩ জনে ৪৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত লকডাউন প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২৫ মে থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল। গত ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের কারণে সংক্রমণের হার নিম্নগামী হয়েছে। এজন্য তিনি লকডাউন কার্যকরে গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, সংক্রমণের হার নিম্নগামী হলেও তা কাক্সিক্ষত অবস্থায় নেমে না আসায় আরো ৭ দিনের বিশেষ লকডাউন বর্ধিত করলে সফলতা আসবে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ প্রদান করেছেন। এজন্য আজ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে জনগণকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখতে আগের বিধিনিষেধ বজায় রেখে লকডাউনের সময়সীমা আগামী ৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।

লকডাউন চলাকালীন যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা হলো- সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। লকডাউন চলাকালীন কোনো প্রকার যানবাহন রাজশাহী-নওগাঁ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও কোনো যানবাহন জেলার বাইরে যেতে না। সকল ধরনের দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান ও ফার্মেসি খোলা থাকবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া কেউ এসব স্থানে যেতে পারবে না। আমের আড়ৎ/বাজার পৃথক জায়গায় দূরত্ব বজায় রেখে আড়তদারের মাধ্যমে আম বিক্রয় করা যাবে। এছাড়াও বাগান থেকে আম ট্রাকে করে প্রেরণ করা যাবে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহন চালু থাকবে। আমের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহনে আনা নেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন কৃষি উপকরণ সার বীজ কীটনাশক কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বিদ্যুৎ, পানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরের কার্যক্রম টেলিফোন, ইন্টারনেট, সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমকর্মীদের সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ডাকসেবাসহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয় চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ/সৎকার ইত্যাদি ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদানসাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য সরবরাহ করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্তে নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপাসনা করতে পারবে।

এদিকে, গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নারীসহ ৩ জন শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে রহনপুর পৌর এলাকাসহ রাধানগর ও গোমস্তাপুর ইউনিয়নের ১ জন করে রয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ১০৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা মনিটরিং কর্মকর্তা ডা. হাসান আলি বলেন, আজ  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৬ জনের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ৩ জনের পজিটিভি রির্পোট পাওয়া যায়। শনাক্তের মধ্যে ২ জন নারী ও ১ জন বৃদ্ধ রয়েছে। তাদের সকলকেই চিকিৎসা দিয়ে বাড়ীতে আইসোলশনে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ১৭ এপ্রিল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ও পিসিআর ল্যাবে মোট ১০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।