চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়া অজ্ঞান পার্টির মূলহোতাসহ দু’সদস্য গ্রেপ্তার

256

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের  বিশ্বরোড মোড় হতে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের (প্রবাসীদের) নিকট থেকে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়া একটি সংঘবদ্ধ চক্রের (অজ্ঞান বা মলম পার্টি) মূলহোতা সহ সক্রিয় দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তাররা হল-মুলহোতা ও বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার কাচনা গ্রামের মৃত খাইরুল আলম মিনুর ছেলে রিপন শেখ(৫৩) ও  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামের শেখ বাদশা মিয়ার ছেলে শেখ আশিক(৩৫)। অভিযানের আগেই চক্রের অপর বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার চরকান্দি গ্রামের রুস্তম শেখের ছেলে বোরহান শেখ(৪২) কৌশলে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে অভিযানটি চালানো হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‌্যাব ক্যাম্পের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তাররা  দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষের চোখে মলম বা কৌশলে খাবারের সাথে উচ্চমাত্রার ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে অজ্ঞান করে তাঁদের নিকটে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। হকার বা সহযাত্রী বন্ধু সেজে এরকম কাজ করে থাকে এ ধরণের চক্রের সদস্যরা। র‌্যাব আরও জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মো.কাইয়ুম(৩৫) নামে এক ব্যাক্তি ওমানে থাকেন। গত মঙ্গলবার(২৩ এপ্রিল) তিনি ওমান থেকে দেশে ফিরে বাড়ী ফেরার জন্য ঢাকার একটি বাস কাউন্টারে ‘চাঁপাই ট্রাভেলস’ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কাইন্টারে অবস্থানকালে কাইয়ুমের সাথে থাকা ব্যাগপত্র দেখে তিনি প্রবাসী বুঝতে পারে। এরপর রিপন শেখ তার পাশের সিটে টিকিট কেটে যাত্রাপথে তার সাথে কথাবার্তা বলে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর বাস চলাকালীন কাইয়ুমকে সে তার সাথে থাকা ঔষধ মেশানো জুস খাওয়ায়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অসস্থ বোধ করেন। তখন তিনি বাসের সুপারভাইজারকে ডাকলে সুপারভাইজার তার শারিরিক অবস্থা দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি যাত্রাপাথে কারও দেয়া কিছু খেয়েছেন কিনা। তিনি পাশে বসা রিপন শেখের নিকট থেকে জুস খাবার কথা জানান। এ সময় বাসটিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে পৌঁছে। সুপারভাইজার তখন অন্য যাত্রীদের সহায়তায় রিপন শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসংলগ্ন উত্তর দেন। বাসের সুপারভাইজার তখন র‌্যাবকে খবর দেন।
র‌্যাব সদস্যরা দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞান কাইয়ুমকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। রিপন শেখকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদ করে বাসে যাত্রীবেশে থাকা তাঁর সহযোগী শেখ আশিককে গ্রেপ্তার করে। পরে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদে পলতক বেরাহান শেখের নাম বেরিয়ে আসে। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, টার্গেট ঠিক করার পর অজ্ঞান পার্টির একেকজন সদস্য এক এক রকম দায়িত্ব পালন করে। গ্রেপ্তার রিপন শেখকে গ্রæপের সদস্যরা ‘গুরু’ নামে ডাকে। সে যাত্রীদের সাথে সখ্যতা তৈরী করে ও অজ্ঞান করার পানি,জুস বা ডাবের পানি খাওয়ায়। গ্রেপ্তার  রিপন শেখ  এ লাইনে নতুন। তার কাজ আশপাশে খেয়াল রাখা। আশপাশের কেউ গুরু রিপন শেখের কর্মকান্ডে সন্দেহ করছে কি না তা জানানো। পলাতক বোরহান শেখের কাজ গুরুর নিকট অজ্ঞান হয়ে যাওয়া যাত্রীর মালপত্র নিয়ে সুবিধামত আগেই নেমে যাওয়া।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‌্যাব ক্যাম্প অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লীডার মারুফ হোসেন খান বলেন, বোরহান রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় কাইয়ুমের কাছে থাকা ব্যাগ,টাকাসহ অনান্য সামগ্রী নিয়ে নেমে যায়। তবে বাসের বক্সে থাকা বড় লাগেজগুলো চক্রটি নিতে পারে নি। গ্রেপ্তারদের নিকট থেকে কাইয়ুমের দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। কাইয়ুম বুধবার রাত পর্যন্ত হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। তিনি সূস্থ হলে তাঁর কি কি খোয়া গেছে তা জানা যাবে। এ ধরণের  ঔষধ সেবনে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে উল্লেখ করে অধিনায়ক বলেন, র‌্যাব এ চক্রের অন্য সদস্যদের আটকে এবং এসব চক্র সম্পর্কে আরও তথ্য উদঘাটনে অভিযান শুরু করেছে। এ ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় মামলা হয়েছে।