চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের নারী ও শিশু সহায়তা শাখার কার্যক্রমে মিলছে সুফল ‘স্বামী সংসার নিয়ে এখন ভালোই আছি’

356

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চাটাইডুবি গ্রামের জহির রায়হানের সাথে আলফি বেগমের ২২ বছরের সংসার জীবনে কালো মেঘের মত নেমে এসেছিলো স্বামীর পরোকিয়া। এই নিয়ে নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন আলফির ভাই বোনকে বাঁচাতে পুলিশের সররাপর্ন হন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশের নারী ও শিশু সহায়তা শাখা দুই পরিবারের বিরোধ মিমাংশার উদ্যোগ নেন। ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর পুলিশের কাছে দেয়া আবেদনের পেক্ষিতে ১৫ দিনের মাথায় ভেঙ্গে যাওয়া সংসার আবারো জোড়া লাগে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের নারী ও শিশু সহায়তা শাখার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে বুধবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শুধু আলফি নয় আরো কয়েকজন নারীর কথা উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৭সালের জুলাই মাস থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়া নারী ও শিশু সহায়তা শাখায় ২০১৭ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৫টি অভিযোগের মধ্যে ১৬জন নারীর সংসার আবারো জোড়া লেগেছে। এছাড়াও দুইজনের সম্পতিতে নারীকে তার পাপ্য আইনগত অধিকার দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন ২৯জন। তবে পুলিশি চেষ্টার পরও উভয় পক্ষ মেনে না নেয়ায় ১০টি অভিযোগ মামলা হিসাবে অন্তভুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে চলতি জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ১১ টি অভিযোগের মধ্যে ১জন স্বামীর ঘরে ফিরেছেন হাসি মুখে, অন্যদিকে দুইজনের বিচ্ছেদ হয়েছে, আর ৮টি উভয় পক্ষের সাথে মিমাংশার চেষ্টা চলছে। এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ মাহবুব আলম বলেন, চাঁপাইবাবগঞ্জে এ সেবা কার্যক্রম চালু হওয়ায় ফলে অন্তত ২০১৭ সালে ও এ বছরের জানুয়ারীতে ৮০ ভাগ যৌতুক সহ নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের কমেছে। স্বামী ঘরে ফিরে যাওয়া আলফি বেগম বলেন ‘‘২২ বছরের সংসার এরমাঝে গত একবছর এক মহিলা নিয়ে ঝামেলা হয়, গ্রামে শালিশ হয়, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না, এরপর পুলিশ সুপারের কাছে দরখাস্ত করি। এরপর তারা মিমাংশার উদ্যোগ নেন। এখন ভালোই আছি।’’
আলফি বেগমের বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ মাহবুব আলম বলেন, আলফি বেগমের স্বামীর সাথে যখন আমরা বসি, তখন সে নিজে আর ভুলগুলো বুঝতে পারে ও নিজেকে শুধরে নিতে আমাদের কাছে সময় চাই। এখন পরিবারটি ভালোই আছে। তিনি জানান,আমাদের নারী ও শিশু সহায়তা শাখা’য় একজন নারী পুলিশ অফিসারকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারন একজন নারীর সমস্যা একজন নারীই ভালো বোঝে ও সহজেই তিনি তার কাছাকাছি যেতে পারেন। এছাড়াও তিনি প্রতিটি আবেদন নিয়মিত ফোলোয়াপ করেন। এ কারনে পরবর্তীতে ওই নারী নিজের মধ্যে সাহস পায় ও যারা তার সাথে ঝামেলা করেছিল তারাও কিছুটা হলেও ভয় পায়। তিনি জানান, সাধারণ প্রক্রিয়ায় মামলা দায়েরের ফলে তা বিচারের মাধ্যমে সমাধান করতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়, সেই সাথে আদালতে মামলার চাপ কমাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই উভয় পক্ষ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে আমরা বিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। দুই একটা যেগুলো সম্ভব হয়না সেগুলো আদালতে যায়। তিনি বলেন, সবার সচেতনা বাড়ানো গেলে ও পুলিশের নারী ও শিশু সহায়তা শাখার জন্য আলাদা জনবল দেয়া সম্ভব হলে আরো বেশি সুফল মিলবে।