চাঁপাইনবাবগঞ্জে চোরাচালান বন্ধে কঠোর অবস্থানে বিজিবি

531

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অবৈধ গরু, মাদক ও অস্ত্রসহ অবৈধ পণ্যের চোরাচালান রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবির ৫৩ ও ৫৯ ব্যাটালিয়ন। এছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণাও শুরু করেছে এ দুই ব্যাটালিয়ন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু চোরাচালানের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকায় এ প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে বিজিবি।

৫৩ বিজিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া বলেন- সীমান্ত রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে বিজিবি। চলমান বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু চোরাচালানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চোরাচালান কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতরা সম্প্রতি তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বৃদ্ধির ফলে চোরাচালান বৃদ্ধিসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের জানমাল ও জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়াবে।
লে. কর্নেল সুরুজ আরো বলেন- বর্তমানে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপে প্রতিবেশী দেশ ভারতে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। চোরাচালানিদের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পারাপারের ফলে মহামারি বাংলাদেশের জন্য আরো মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে।
বিজিবির এই কর্মকর্তা আরো বলেন- দেশের চাহিদা পূরণের জন্য দেশীয় গরুর উৎপাদনকে উৎসাহিত করা এবং বিদেশী পণ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের জানমাল ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় এই ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে টহল তৎপরতা। এছাড়া রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমান্তে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সমন্বয় সাধনপূর্বক মাইকিং এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সীমান্তের স্থানীয় জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, কোম্পানি ও বিওপি পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় গরুসহ অন্যান্য অবৈধ পণ্য চোরাচালান প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারিদের শনাক্ত করে তাদের নিকট হতে মুচলেকা নিয়ে বিওপিতে নিয়মিত হাজির হওয়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
লে. কর্নেল মোহাম্মদ সুরুজ মিয়া বলেন, সর্বোপরি আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে প্রতিপক্ষ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট এবং কোম্পানি ও বিওপি কমান্ডার পর্যায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ৫৯ বিজিবির রহনপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণ গরু, অস্ত্র মাদক এবং অন্য যে কোনো রকমের চোরাচালান করার উদ্দেশ্যে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালান রোধকল্পে প্রত্যেক বিওপির সামনে চেকপোস্ট স্থাপন করে চোরাচালান বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চিহ্নিত চোরাকারবারিদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিজিবির কঠোর তৎপরতায় চোরাকারবারিদের হোতা পলাতক রয়েছে। সন্দেহভাজন চোরাকারবারিদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক টহল ও বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান আরো বলেন, ‘আলোকিত সীমান্ত’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্র জনসাধারণের মধ্য থেকে আগ্রহীদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উদ্যোক্তা নির্বাচনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রহনপুর ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপ‚র্ণ সীমান্ত এলাকায় ৪ হাজার ৯৭১টি অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন হতে প্রাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
৫৯ বিজিবির রহনপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আরো বলেন, সদর দপ্তর হতে এই ব্যাটালিয়নের অনুক‚লে এরই মধ্যে সকল প্রকার ভ‚মিতে চলতে সক্ষম ২টি এটিভি বরাদ্দ করা হয়েছে। এটিভির মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় টহল ব্যবস্থা আরো জোরদার করা সম্ভব হবে।