চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ইসলামী শাখার উদ্বোধন

108

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ইসলামী শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে জেলা শহরের পুরাতন বাজারের ওমর ভবনে ভার্চুয়ালভাবে এর উদ্বোধন করেন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত। এ সময় তার সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার, কাজী মসিউর রহমান জায়েদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল ইসলাম, আতাউস সামাদসহ অন্যরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার এ্যান্ড কমার্সের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ও দৈনিক গৌড় বাংলার সম্পাদক মো. হাসিব হোসেন, গ্রামীণ ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমানসহ, ব্যাংকের চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত বলেন, আমাদের একটি শরীয়া বোর্ড হয়েছে; সেখানে বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদরা আছেন। সত্যিকারের ইসলামী ব্যাংকিং যেভাবে চালানো দরকার, আমরা সেভাবে এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করব। তিনি আরো বলেন, আপনারা প্রতিটি মানুষকে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি মানুষ যদি ব্যাংকিংয়ের আওতায় চলে আসে তাহলে আমাদের সরকারও উপকৃত হবে। আপনারা জানেন যে, আমাদের সরকার চাইছে প্রত্যেকটা মানুষ ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসুক এবং প্রতিটি জায়গায় ব্যাংক করা হোক। তিনি বলেন, আপনারা প্রতিদিন যেই টাকাটা ব্যাংকে রাখছেন সেই হিসাবটা আমাদের কাছে আসছে এবং এর সঞ্চালনটা বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারছে কত টাকা সার্কুলেট হচ্ছে। এটার ওপর নির্ভর করে আমাদের দেশের উন্নয়ন কাজ সরকার বাজেটের মাধ্যমে পেশ করছে। আপনারা যদি ৫০০ টাকা জমা দেন তাহলে আপনারাও দেশের উন্নয়নে সংযুক্ত হচ্ছেন।
স্বাগত বক্তব্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার বলেন, আমরা প্রথমে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এক্সেপশনাল ব্যাংকিংয়ে ছিলাম; কিন্তু ২০২০ সালে আমরা ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরিত হচ্ছি এবং ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নাম পরিবর্তন করে এনআরবি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড হবে। তারপর ব্যাংকটি পুরোপুরি ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হবে। তিনি আরো বলেন, আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি শাখা চালু করছি। আমরা আশা করছি, এখানে একটি আধুনিক এবং উন্নত সেবা দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকা-ে আমাদের এই শাখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সময় গোলাম সারোয়ার বলেন, আধুনিক ব্যাংকিংয়ের যত ধরনের সেবা আছে, সব সেবাই আপনারা পাবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বর অ্যান্ড কমার্সের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আম, লাক্ষা, কাঁসা, পিতল, সুগন্ধি চালসমৃদ্ধ জেলা এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই জেলায় আমরা প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন আম বিক্রি করে প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫০০ কোটি টাকা আয় করে থাকি। আমাদের এই সুগন্ধি চাল বিদেশেও রপ্তানি করি। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর হচ্ছে সোনামসজিদ। এছাড়াও বাংলাদেশের তিনটি রেলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটিতে মালামাল আমদানি-রপ্তানি হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি নেপাল-ভুটানের সাথে সংযোগের মাধ্যমে এই রেলবন্দরটি চালু হতে যাচ্ছে সেটি আমাদের রহনপুরে অবস্থিত। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক মানুষ বিদেশে কর্মরত। প্রতি মাসে রেমিটেন্সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশাল ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিকভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী একটি জেলা। এই জেলায় যদি ভালোভাবে সেবা প্রদান করা হয়, মানুষের সেবা করা হয় তাহলে আগামী দিনে সফলতা অর্জন করা যাবে। তিনি আরো বলেন, আমি আশা করি এনআরবি ব্যাংক চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি এবং এসএমই সেক্টরে সহযোগিতা করবে।
প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ও দৈনিক গৌড় বাংলার সম্পাদক মো. হাসিব হোসেন বলেন, আমরা মনে করি যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশের আমের রাজধানী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমের একটি সম্ভাবনাময় জেলা। যে জেলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এই জেলার অর্থনীতি একাধারে যেমন কৃষিনির্ভর, আমনির্ভর অন্যদিকে ব্যবসানির্ভর। এখানে দুটি লান্ডপোর্ট রয়েছে, একটি রেলওয়ে আরেকটি স্থলবন্দর। আমরা যদি এখানকার ব্যবসার বিশ্লেষণ করি, তাহলে বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পশ্চিমের একটি দরজা হচ্ছে এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। সেই দরজার যদি আমরা যথাযথ ব্যবহার করতে পারি ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারি তাহলে অবশ্যই এর যে ব্যাপ্তি তা আরো ব্যাপকতা লাভ করবে। তিনি আরো বলেন, এখানে যেমন ব্যবসার সম্ভবনা আছে তেমনি শিল্পোদ্যোগ বা শিল্প স্থাপনেরও সম্ভাবনা আছে। এখানে শিল্পাঞ্চল করার সম্ভাবনা আছে। সেখানে যদি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ভূমিকা রাখে, তাহলে একাধারে এই অঞ্চলের মানুষ যেমন উপকৃত হবে তেমনিভাবে এনআরবি গ্লোবল ব্যাংকও তার কর্মপরিধি এগিয়ে নিতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ের মাধ্যমে এনআরবি ব্যাংক তার যাত্রা শুরু করে। তারই ধারাবাহিকাতায় সারাদেশ ৭৫টি শাখার পাশাপশি ৬৭টি এটিএম বুথ আছে। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে কনভেনশন ব্যাংকয়ের পাশাপশি ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে ২০টি ইসলামী ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। গতকাল বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৭৬তম এনআরবি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকিং শাখার উদ্বোধন করা হলো।