চাঁপাইনবাবগঞ্জের ধনিয়াচক মসজিদ

711

<বুরহানুর রহমান>


চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ এলাকা এক সময়ের জমজমাট ও সমৃদ্ধ জনপদ- গৌড়ের অংশ। বেশ কয়েকটি কারণে গৌড় রাজ্য তার অস্তিত্ব হারায়। কারণগুলোর মধ্যে মানুষ্য সৃষ্ট একটি অন্যতম কারণও ছিল-বর্জ্যরে চরম অব্যবস্থাপনা। ধনিয়া গাছিতে আশেপাশে মসজিদটি ছাড়া গৌড় নগরীর তেমন কোনো সাক্ষী এখন আর অবশিষ্ট নেই। মসজিদের কাছাকাছি কোনো ঘরবাড়িও নেই। মসজিদে যেতে বেশ কিছুটা রাস্তা একদম মেঠোপথ ধরে যেতে হয়। পৌছানোর কিছুক্ষণ আগে ঝুম বৃষ্টি হওয়ায় বেশ খানিকটা পথ কাদা মাড়িয়ে যেতে হল। বেশ বড় একটি আমবাগানও পেরুতে হয়। আমবাগানটি মাকড়সাদের বেশ প্রিয়। ধনিয়াচক মসজিদ বাংলাদেশ প্রতœতত্ত¦ অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত প্রতœতাত্তি¦ক স্থাপনা। এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো তত্ত¦াবধায়ক নিয়োজিত হননি। তাই ভেতরে দেখতে হলে-যেকোনো নামাজের ওয়াকতে যেতে হবে, অন্যথায় বাইরে দেখেই সন্তুষ্ট হতে হবে। মুসলিম শাসনামলের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যকলায় নির্মিত ধনিয়াচক মসজিদ প্রতœতত্ত¦ অধিদপ্তরের তত্ত¦াবধায়নে সংস্কার করা হয়েছে। ঠিক কার উদ্যোগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি। মসজিদের চার কোণে ৬ কোনা ৪টি মিনার রয়েছে। আয়তকার এ মসজিদটিতে ৬টি বর্গের উপর ৬টি গম্বুজ। পূর্বদিকে ৩ টি ও উত্তরে ২ টি প্রবেশপথ নিয়ে মোট প্রবেশপথ ৫টি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বছরখানেক আগে সংস্কার করা মসজিদের বেশ কিছু নতুন টেরাকোটা এখনই নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু প্রায় ৫০০বছর আগের টেরাকোটাগুলো আজও যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। বরেন্দ্র এলাকার মাটি এমনিতেই টেরাকোটার জন্য বিশেষায়িত। যে মাটি দিয়ে ৫০০ বছর আগে টেরাকোটা নির্মিত হয়েছে সে মাটি দিয়েই নির্মিত টেরাকোটা ১ বছরও টেকে না। কারণটাও দুঃখজনক- টেরাকোটার টালিগুলো ভালোভাবে পুড়ান হয়নি। প্রতœতত্ত¦ স্থাপনাগুলোও সম্ভবত, দেশের রাস্তা সংস্কারের মতো প্রতিবছর করতে হবে। মসজিদের মেহরাব সংখ্যা ৩টি। মাঝেরটিতে টেরাকোটায় লতা ও ফুলের নকশা দারুন। বাকি মেহরাব ২টিতে মুলতঃ ইটের উপর কারুকাজ। ধনিয়াচক মসজিদ যেতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কানসাট পর্যন্ত যেতে হয়। তারপর হয় সোনামসজিদ স্থলবন্দর যেয়ে ভ্যান বা অটো ভাড়া করে ধনিয়াগাছি যাওয়া যায় অথবা কানসাট থেকেই ভ্যান বা আটো ভাড়া করে যাওয়া যায়। সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে এ মসজিদের দুরত্ত প্রায় দেড় কিলমিটার।