চলচ্চিত্র অঙ্গনে বাড়ছে অস্থিরতা

544

দিন দিন অস্থিরতা বাড়ছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী, পরিবেশক, হল মালিক কারো মনে স্বস্তি নেই। ব্যবসায়িক মন্দা, মানহীন চলচ্চিত্রের আধিক্য, নকল গল্প ও পোস্টার, ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার, শিল্পী সংকট, ভিডিও পাইরেসির আগ্রাসন, আকাশ সংস্কৃতির দাপট প্রভৃতি কারণে চলচ্চিত্র শিল্প গত কয়েক বছর ধরেই কঠিন সময় পার করছে। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বিদেশি শিল্পীদের ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ, শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে পরিচালক সমিতির লিগ্যাল নোটিশ ও তা নিয়ে দুই পক্ষে তর্ক-বিতর্কসহ বিভিন্ন বিষয়। এসব কারণে দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র প্রযোজক অকপটে এ বিষয়ে বলেন, আবারো চলচ্চিত্রে হতাশা নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে এ বছরও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। রকিবুল আলম রকিবের ‘মাস্তান পুলিশ’, বিপ্লব শরীফের ‘ভ্রান্তি’, ওয়াকিল আহমেদের ‘কত স্বপ্ন কত আশা’, মিজানুর রহমান লাবুর ‘তুখোড়’, ‘নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার’, হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‘সত্তা’সহ আরো বেশকিছু ছবি গত চার মাসে আশানুরূপ ব্যবসা করেনি। এ প্রসঙ্গে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, চলচ্চিত্রে যে অস্থিরতা চলছে তার কারণে গত চার মাসে কোনো ছবিই তেমন লাভের মুখ দেখেনি। এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সত্যিই খুব খারাপ সংবাদ। সামনে রোজার ঈদ। এই ঈদের দিকে চেয়ে আছেন সকল প্রযোজক-পরিচালক। আশা করি, এবারের ঈদে ভালো কিছু ছবি ব্যবসা করবে। তবে পুরো বছরই ব্যবসা চাঙ্গা রাখতে ভালো মানের কিছু ছবি প্রয়োজন। সামনে রোজার ঈদ। আর এই ঈদে জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এসকে মুভিজের ‘নবাব’, ‘ডুব’, ‘বস টু’ ছবিগুলো মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ ছবিটিও সেন্সরে জমা হয়েছে। ঈদে মালেক আফসারীর ‘অন্তর জ¦ালা’, শামীম আহমেদ রনীর ‘রংবাজ’সহ আরও বেশকিছু ছবি মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে, এ ছবিগুলোর ব্যবসার হাল কি হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন দিলু বলেন, শাকিব ও পরিচালক সমিতির মধ্যে যা চলছে সেটা অনাকক্সিক্ষত। চলচ্চিত্রের জন্য এটি বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর একজন দর্শক ভালো ছবি মনে করে সিনেমা হলে দেখতে গিয়ে যদি দেখেন এটি ভালো ছবি না তাহলে পরবর্তী সপ্তাহে ভালো ছবি মুক্তি পেলেও আসবেন না। এমনই হচ্ছে এখন। এভাবে অনেক দর্শক হারিয়ে ফেলেছি আমরা।
ভালো ছবি নির্মাণের পাশাপাশি সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক না হলে বাংলা ছবি ঘুরে দাঁড়াবে না। এদিকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা অনেক কম থাকায় কোন প্রযোজকই এক-দেড়শ’ প্রেক্ষাগৃহে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সিনেমা প্রদর্শন করে লগ্নিকৃত পুঁজি তুলতে পারছেন না। এর ওপর বাড়তি সংকট হিসেবে রয়েছে ভিডিও পাইরেসি। সব মিলিয়ে সিনেমা শিল্পে একটা হাহাকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোনোভাবেই এই সিনেমা শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে না বলে মতামত দিয়েছেন একাধিক প্রযোজনা সংস্থার মালিক। খুব শিগগিরই শাকিব ও পরিচালক সমিতির একে অপরকে দোষারপের বিষয়টির সুরাহা না হলে সিনেমা শিল্পের অস্থিরতা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। অন্যদিকে এ বিষয়টিতে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। সামনের ঈদে বাংলা ছবি কেমন ব্যবসা করবে জানতে চাইলে শাকিব খান বলেন, এবারের ঈদ হবে ফাটাফাটি ঈদ। আমার বিশ্বাস, এবারের ঈদে একাধিক ছবি ভালো ব্যবসা করবে। অন্য সময়ের তুলনায় এবারের ঈদে ব্যবসায়িক সাফল্য পাবেন প্রযোজকরা। তবে পরিচালক, প্রযোজক ও শিল্পীদের এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।