ঘাম ঝরা দিনের প্রস্তুতি

95

বসন্তের বাতাস স্নিগ্ধ। আবার একই সঙ্গে গরমের আগমনী বার্তাও সেখানে নানাভাবে স্পষ্ট। অতিষ্ঠ গরমেও সুস্থ থাকার চিন্তাই থাকে সবার। সুস্থ থাকতে হলে পোশাক থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাসেও চাই প্রাত্যহিক পরিবর্তন। গরমের খরতাপে শুধু ত্বকই যন্ত্রণায় ভোগে না। এই যন্ত্রণায় আঁকুপাকু করে শরীরের ভেতরটাও। সবচেয়ে বড় যন্ত্রণায় থাকে মন। সার্বিকভাবে নিজেকে সতেজ রাখার স্বার্থেই কিছু বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
হালকা রঙের সুতি কাপড় পরুন : গরম পড়লে জামার রঙ, ধরণ আর ডিজাইনকে গুরুত্ব দিতেই হবে। সুতি কাপড় সহজে ঘাম শুষে নিতে পারে। আর পরতেও আরাম। মেয়েদের জন্য অ্যান্ডি, শিফন, কটন, কোটা, ধুপিয়ান, লিলেনের পোশাকও ভালো। তবে সুতির ওপর ব্লকপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট ও হালকা সুতার কাজ পোশাকে আনতে পারে বৈচিত্র্য। তাছাড়া পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে মানানসই এমন রং বেছে নেওয়া ভালো। কালো রঙকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। গরমে রোদের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। আমরা জানি, কালো রঙের পোশাক সূর্যের তাপ বেশি শোষণ করে। তাই কালো রঙের পোশাক পরলে বেশি গরম লাগবে। বলা বাহুল্য, গরমকালে সাদা রঙের পোশাকের জয়জয়কার সব সময়ই। গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক চোখের জন্যও শান্তি এনে দেয়। হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, হালকা নীল, বাদামি, আকাশি, হালকা হলুদ, ধূসরসহ হালকা রঙের পোশাক এই গরমে প্রাধান্য দিতে পারেন। এ তো গেলো মেয়েদের কথা। ছেলেদের পোশাকের ক্ষেত্রে একরঙা, ছাপার বা চেক কাপড়ের শার্ট আরামদায়ক। ঢিলেঢালা শার্ট পরলে ঘামে কাপড় নষ্ট হবে না আর এজন্য একটু ঢিলেঢালা পরাই ভাল। হাতের কাজ করা ফতুয়া বা পাঞ্জাবি হতে পারে আপনার উত্সবের পোশাক। সঙ্গে পরতে পারেন জিনস বা একরঙা ট্রাউজার। এতে গরমে যেমন আরাম পাবেন, তেমনি আপনাকে দেখে চোখ জুড়াবে সবার। এছাড়া এ সময়ে আরামদায়ক পোশাক হিসেবে টি-শার্টের বিকল্প পোশাক কমই পাওয়া যাবে। বিশেষ করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেদের কাছে এই পোশাকের কোনো বিকল্প নেই। কারণ টি-শার্ট, জিনস, গ্যাবার্ডিন কিংবা অন্য প্যান্টের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। এছাড়া রঙ ও নকশায় একটু ফ্যাশন সচেতন হলে টি-শার্ট পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যাওয়া যায়।

প্রচুর পানি পান করুন : গরমে পানিশূণ্যতা একটি বড় সমস্যা। গরমে আমাদের শরীর থেকে পানি দ্রুত কমে। শরীর থেকে পানি বের হয়ে গেলে তা পূরণ করতে পানি ও পানিজাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে। গরমে ক্যাফেইন ও কার্বনেটেড-জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো। অনেকে কাজের মাঝে ঘন ঘন চা ও কফি পান করেন। আবার কেউ গরম তাড়াতে কোমল পানীয়ের দ্বারস্থ হন। এগুলো হয়তো সাময়িকভাবে আরাম দেয়, কিন্তু তৈরি করতে পারে হজমের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা। তাই চেষ্টা করুন পানি পান করার। অনেকে আজকাল ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক পান করেন। ডায়বেটিস বা প্রেশারের সমস্যা যাদের তাদের এই ধরনের পানীয় পানে নিষেধ আছে। যদি বেশি দূর্বল লাগে তাহলে স্যালাইন পান করুন। স্যালাইন অবশ্যই আধ লিটার পানিতে মেশাবেন। এর কম হলে সমস্যা হতে পারে। প্রচুর পানি খেলে ত্বক ও নখ ভালো থাকে। আর শরীরের দুর্বলতাও কম কাজ করে।

ঠান্ডা গরমের ভারসাম্য মানুন : ঠান্ডা-গরমের ভারসাম্য মেনে চললে গরমে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা কম থাকবে। গরম লাগছে, তাই বলে বাইরে থেকে ঘর্মাক্ত অবস্থায় ফিরেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না। আগে প্রথমে জিরিয়ে নিন। নরমাল তাপমাত্রার পানি পান করুন। আবার অনেকে ঘরে ফিরেই গোসল করেন। এমনটি করলে সর্দি-কাশির সমস্যায় পড়তে হবে।

গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন : গরমে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে, তাই গুরুপাক খাবার কম খাওয়াই ভালো। মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়া ও পচা-বাসি খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বিরিয়ানি, খিচুড়ি বা তৈলাক্ত খাবার এড়াতে পারলেই ভালো। এসব খাবার গরমে পরিপাকতন্ত্রে চাপ ফেলে। পানিশূণ্যতাও তৈরি করে। গরমে ত্বক ভালো রাখতে গেলে খাবারদাবারে সতর্ক হওয়া জরুরি। খাওয়াদাওয়া ঠিক থাকলে ত্বকে তার প্রভাব পড়ে।

ত্বকের যত্নে বাড়তি মনোযোগ : রোদ ও ধুলোবালিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ত্বকের। দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে বা ত্বকের যত্নে উদাসীন হলে ক্ষতি হয় বেশি। রোদে রয়েছে ভিটামিন-ডি, যা ত্বকের পুষ্টি জোগায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোদে পোড়াটা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এ সময় সানবার্ন সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। এছাড়া ঘামাচি, র্যাশসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধুলোবালিতে লোমকূপে ময়লা জমে মুখে ব্রণ হয় এবং রোদে পোড়া ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। বাইরে বের হওয়ার আগে এবং ঘরে ফেরার পর ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে বের হলে গরমের দিনে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করবেন।