গোমস্তাপুর-নাচোলে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আম-বোরো ধান ও সবজির ক্ষতি

গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে শিলাও পড়েছে। এতে কোনো কোনো এলাকায় আম, বোরো ধান ও সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হয়। এতে জেলার ৪৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর বোরো ধানের মধ্যে ১৭৫ হেক্টর আক্রান্ত হয়। তবে সবমিলিয়ে ১৮ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হবে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
কৃষি অফিস আরো জানায়, আমবাগান আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ হেক্টর। তবে সবমিলিয়ে ৭ থেকে ৮ হেক্টর বাগানের আম নষ্ট হতে পারে। এছাড়া সবজি নষ্ট হয়েছে ২০ হেক্টর জমির।
এদিকে আমাদের গোমস্তাপুর প্রতিনিধি আল মামুন বিশ্বাস জানিয়েছেন, গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, আমসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ২টার দিকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে ওই এলাকার পাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে চাষিদের স্বপ্ন মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, শিলার আঘাতে ধান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা ধানের শিষ থেকে ধান ঝরে পড়ে গেছে মাঠজুড়ে। এছাড়া আম ও লিচু গাছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পার্বতীপুর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান নামে এক কৃষক জানান, দুপুরের পর থেকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়। প্রথম দিকে হালকা বাতাস শুরু হয়; কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় ব্যাপক ঝড়। এর সাথে শিলাবৃষ্টি। এতে আমাদের গাছপালাসহ ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
একই ইউনিয়নের ফিরোজ নামের এক কৃষক জানান, অনেকের পাকা ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেকের পাকা ধান এখনো কাটা হয়নি। আমারও কিছু ধান কাটা বাকি রয়েছে আজ (গত বৃহস্পতিবার) হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কারণে ধান ঝরে কাদা ও পানিযুক্ত জমিতে পড়ে গেছে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
সোহেল হোসেন নামে আরেক কৃষক জানান, তার দুই বিঘা জমিতে কিছুদিন আগে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে বিক্রি শুরু করেছিলেন। এই শিলাবৃষ্টিতে তার সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
আমচাষি ফয়সাল কবির জানান, তার বাগানে শতাধিক গাছের আম ঝরে গেছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, মাত্র কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হবে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াশিন আলী এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বৃহস্পতিবার গড় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২০ মিলিমিটার। এর মধ্যে সদর উপজেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার। এছাড়া শিবগঞ্জে ১০ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ৫ মিলিমিটার, নাচোলে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ভোলাহাটে কোনো বৃষ্টি হয়নি। তিনি জানান, বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টিতে গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর, নাচোল উপজেলার কসবা, নাচোল ও নেজামপুর ইউনিয়নের পাকা বোরো ধান, আম ও সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত্র এলাকায় কিছু আমে দাগ ধরতে পারে। তবে সবমিলিয়ে এই বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। কারণ এই বৃষ্টির ফলে আমের আকার ও ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।