গোমস্তাপুরে সরকারি প্রণোদনায় অধিক জমিতে সরিষার আবাদ

62

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মাঠগুলোতে হলুদের সমারোহ। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে উপজেলায় অধিক পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষকসহ উপজেলা কৃষি বিভাগ।
এবার প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগ ৫ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। পরে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৫০ জন।
সরিষার জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে বারি সরিষা-১৪। দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়াসহ বিদেশ থেকে ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষকদের মধ্যে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চলতি মৌসুমে গোমস্তাপুর উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মাঠগুলোতে শুধু হলুদের সমারোহ। শীতের সিক্ত বাতাশে কৃষকের স্বপ্ন দুলছে সরিষার মাঠে। মাঠগুলোতে চোখ জুড়ানো সরিষা ফুলের অপরুপ দৃশ্য। কৃষকদের মধ্যে জেগেছে আনন্দের জোয়ার।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, দুই একটি চাষাবাদ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপণ করা হয়ে থাকে। আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক লাগে কম। কম খরচে সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মাঠগুলোতে সরিষার ফল আসতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক সরিষা কেটে বোরো ধান চাষাবাদে নেমে পড়বে। ভালো ফলন ফলাতে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে জমিতে ভালো ফলন হবে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছেন।
এবার উপজেলায় টরি সরিষা ৭- ৯৫০হেক্টর, বারি ১৪- ৪৩১০ হেক্টর, বারি ১৫- ১০ হেক্টর, বারি ১৭-৪৫০ হেক্টর,বারি ১৮- ১০৫ হেক্টর, বিনা ৯- ৪২৫ হেক্টর, বিনা ৪- ১৫০ হেক্টর, বারি ৯- ১০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রণোদনা বীজ ও সার পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৫০ জন।
রহনপুর এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিস তাঁকে সরিষা চাষাবাদের জন্য সার ও বীজ বিনামূল্যে সহায়তা করেছে। জমিতে সেই বীজ বপণ করে সরিষা ভালো হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষা চাষাবাদে খরচ কম। উৎপাদন ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সামনে বছর অতিরিক্ত জমিতে সরিষা চাষ করবেন বলেও তিনি জানান।
রহনপুর পৌর এলাকার কৃষক মামুন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে বারি-১৪ সরিষার চাষাবাদ করেছেন। দেখা যাক কেমন উৎপাদন হয়। আশা করছি বাজারে সরিষা দাম ভালো থাকবে। পরিচর্যা করলে ভালো ফলন হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান সরিষা উঠিয়ে ইরি ধান চাষাবাদ করবেন।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, চলতি মৌসুমে গোমস্তাপুর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৯৫০ জনকে প্রণোদনার বীজ ও রাসায়নিক দেয়া হয়েছে। সরকার তেলের ঘাটতি পূরনে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নানা পদক্ষেপ নিয়ে উৎসাহিত করছেন।
তিনি আরো বলেন সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়াতে স্বল্প মেয়াদী আমন ধান চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষাবাদে খরচ হয় কম, সেচ ও সার লাগে অত্যন্ত কম। সরিষা পাতা উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার হয়। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সরিষা কেটে কৃষকরা ইরি বোরো ধানও উৎপাদন করতে পারবে বলে তিনি জানান।