গুপ্তচর হত্যাচেষ্টা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়ার’ আহ্বান মের

175

যুক্তরাজ্যের মাটিতে পক্ষত্যাগী রুশ গুপ্তচরকে বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পশ্চিমা দেশগুলোকে মস্কোর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোভুক্ত দেশগুলোর রাশিয়ার কূটনৈতিক বহিষ্কারের হিড়িকের মধ্যে মে-র এই আহ্বান এলো, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। সলসবারির উইল্টশায়ারে পক্ষত্যাগী গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে হত্যার জন্য যে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে তাকে সোভিয়েত আমলে বানানো নার্ভ এজেন্ট নোভিচক বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে নার্ভ গ্যাস ব্যবহারের এটাই প্রথম অভিযোগ। হত্যাচেষ্টার জন্য ক্রেমলিনকে দায়ী করে রাশিয়ার ২৩ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে লন্ডন; মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোও সোমবার একই পথে হেঁটে রাশিয়ার শতাধিক কূটনীতিককে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেয়, যাকে স্নায়ুযুদ্ধের পর মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর একাট্টা অবস্থান হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। ৪ মার্চ স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করা রাশিয়া কূটনীতিক বহিষ্কারের এ হিড়িককে পশ্চিমের ‘উসকানিমূলক কর্মকা-’ অ্যাখ্যা দিয়েছে; বলেছে, মস্কো অবশ্যই এ ধরনের পদক্ষেপের পাল্টা ব্যবস্থা নিবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর যৌথ পদক্ষেপ ইইউ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুকুটে বড় ধরণের কূটনীতিক সাফল্যের পালক যোগ করল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা; যদিও এ বিষয়ে মে নিজের দেশেই কী পরিমাণ সমর্থন পাবেন সে বিষয়ে বিস্তর সন্দেহ আছে তাদের। গত মঙ্গলবার লন্ডনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে মে বলেন, শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতেই দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি ব্যবস্থা নেয়নি, উদ্ভূত হুমকিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে বলেই নিয়েছে। ওই বেপরোয়া আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল গতকাল (সোমবার)। যদিও আরও করার বাকি আছে। রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের ও আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের,” মে এমনটাই বলেছেন বলে জানান তার মুখপাত্র। পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুসরণ করে নেটো জোটও তাদের ব্রাসেলসের সদরদপ্তর থেকে রাশিয়া মিশনের সাত কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে, বন্ধ রেখেছে নতুন তিনজনের নিয়োগ প্রক্রিয়াও।
এর ফলে নেটো মিশনে রুশ কূটনীতিকের সংখ্যা ৩০ থেকে ২০ এ নেমে এলো বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এটা রাশিয়াকে স্পষ্ট বার্তা দিল যে মূল্য দিতে হবে, বলেন নেটোর মহাসচিব জেনস স্টোল্টেনবার্গ।
আয়ারল্যান্ড ও মলদোভাও এদিন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার করে ইউরোপীয় জোটের অন্য সদস্য দেশগুলোর নেওয়া পদক্ষেপে সামিল হয়। এ নিয়ে জোটটির মোট ২২টি সদস্য দেশ মস্কোর কূটনীতকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিল।
স্ক্রিপাল হত্যাচেষ্টায় ৬০ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মস্কোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বহিষ্কৃত কূটনীতিকদের মধ্যে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত ১২ গোয়েন্দা কর্মকর্তাও আছেন।
একই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র সিয়াটলের রাশিয়ান কনসুলেট বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে টেলিফোনে রাশিয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিন নেতা যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় কূটনীতিক বহিষ্কারসহ পশ্চিমের একাট্টা প্রতিক্রিয়ায় সমর্থন জানান, বিবৃতিতে বলেছে হোয়াইট হাউস। নেটোর একতা নিয়ে যাদের সন্দেহ ছিল তাদের প্রতি যৌথ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা একটা বার্তা দিয়েছে জানিয়ে এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস।
পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিক বহিষ্কারের পাল্টায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা এখনো জানায়নি রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গত মঙ্গলবার সাইবেরিয়ার শহর কেমেরোভোতে পুড়ে যাওয়া একটি শপিং মল পরিদর্শন করেছেন। ওই অগ্নিকা-ে শিশুসহ ৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। স্ক্রিপাল হত্যাচেষ্টা এবং তার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে পুতিন সেখানে কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।