ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি : ঘটনার পর পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানান। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পুলিশ, শিল্প পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বয়লার পরিদর্শক, কলকারখানা পরিদপ্তর, বিজিএমইএ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এই তদন্ত কমিটির সদস্য। এই কমিটিকে বয়লার বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সদর দপ্তরের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান। ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের (ঢাকা) সহকারী পরিচালক দীলিপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের চিকিৎসার খরচ দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
বিস্ফোরিত বয়লারের মেয়াদ ছিল না : যে বয়লারটি বিস্ফোরিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, নয় দিন আগেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান জানিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত আট সদস্যের কমিটি গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাজ শুরু করে। রায়হানুল বলেন, আমরা সাতটি কারণ সামনে রেখে তদন্তকাজ শুরু করেছি। তদন্তের শুরুতে কাগজপত্র দেখে জানতে পেরেছি, ওই বয়লারটির রিনিউ করার মেয়াদ শেষ হয়েছে গেল ২৪ জুন। তবে এ জন্যই যে বয়লারটি বিস্ফোরিত হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হতে পরেননি বলে তিনি জানান। দীলিপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে গঠিত কমিটিও গতকাল মঙ্গলবার সকালে তদন্তকাজ শুরু করেছে বলে দীলিপ কুমার জানালেও তিনি তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
স্বজনদের কাছে ৮ জনের লাশ হস্তান্তর : নিহত ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৮ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। মাগুরার শালিকা থানার গোবরা এলাকার আয়ূব আলী সর্দারের ছেলে ফায়ারম্যান আলামিন হোসেন (৩০), বাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার কু-া এলাকার মৃত সাগর আলী মীরের ছেলে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান, রাজবাড়ির গোয়ালন্দ থানার চরকাছন্দ বরাটবাজার এলাকার মনিন্দ্রনাথ শীলের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শীল, বগুড়ার সোনাতলা থানার হরিখালী এলাকার মো. সাহার আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার মৃত মকছুদ আহমদের ছেলে আবদুস সালাম, লুৎফুল হকের ছেলে মনসুরুল হক (৪০) ও নুরুল মোস্তফা চৌধুরীর ছেলে আশরাফ হোসেন চৌধুরী এবং চাঁদপুর সদর থানার বাথুরপুর মদনা এলাকার বাচ্চুর ছেলে গিয়াস উদ্দিনের (৩০) লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও এল.এ) মো. মাহমুদ হাসান জানান, এখনও দুইটি লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে একজনের ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে একজনের লাশ রাখা হয়েছে। এই দুইজনের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। তারা আসলে লাশ হস্তান্তর করা হবে। স্বজন ও কারখানা কর্তৃপক্ষ নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করেছে। তিনি জানান, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।