খাশোগির ওপর নজরদারি অব্যাহত ছিল সৌদি আরবের

130

সমালোচকদেরকে হেনস্থা করতে ইন্টারনেটে অব্যাহত নজরদারি চালিয়ে আসছে সৌদি আরব। গত শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নজরদারির মাধ্যমে যাদের হয়রানির প্রচেষ্টা চালানো হয়, হত্যাকা-ের শিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগিও তাদের মধ্যে ছিলেন। এ কাজে নিয়োজিত ছিল একটি ট্রল ফার্ম। নজরদারি প্রক্রিয়ায় জড়িত এই বাহিনীকে ‘টুইটার আর্মি’ আখ্যা দিয়েছে তারা। টুইটারের অভ্যন্তরের একজন সম্ভাব্য গোয়েন্দাকে কাজে লাগিয়ে তারা ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতো। এ ব্যাপারে জানতে টুইটার ও সংশ্লিষ্ট সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি টাইমস। ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন জামাল খাশোগি। শুরুতে সৌদি আরব দাবি করেছিল, তিনি ভবন থেকে জীবিত বের হয়ে গেছেন। তুরস্ক দাবি করে, ১৫ সদস্যের একটি গোয়েন্দা স্কোয়াড কনস্যুলেটের ভেতরেই খাশোগিকে হত্যা করেছে। সৌদি আরব এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো তারা খাশোগি নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে। সৌদি আরবের দাবি, খাশোগি কনস্যুলেটে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। একপর্যায়ে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার ও পাঁচ জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত শনিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সমালোচকদের হয়রানি করতে ২০১০ সালে সৌদি কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছিল। মার্কিন ও সৌদি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপদেষ্টা সৌদ আল কাহতানি এ কৌশল তৈরি করেছিলেন। প্রতিবেদনে উঠে আসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে খাশোগি ও অন্য প্রভাবশালী সৌদি নাগরিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানানোর বিবরণ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এভাবে জনমতকে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়। রিয়াদভিত্তিক তথাকথিত একটি ট্রল ফার্মকে ব্যবহার করে টুইটারের মধ্যকার একজন সন্দেহভাজন গোয়েন্দার মাধ্যমে ওই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে নজরদারি চালানো হতো। াশোগির অন্তর্ধানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিতর্ক ও চাপের মুখে সৌদি যুবরাজ যে পাঁচ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন, তাদেরই একজন কাহতানি। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ২০১৫ সালে সৌদি আরবে ঘোষিত ব্যয় কর্তন প্রশ্নে জনমত নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনজি অ্যান্ড কো.। ৯ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বেশিরভাগ জনমত নেতিবাচক। বলা হয়েছিল, তিন ব্যক্তির দ্বারা জনমত প্রভাবিত হচ্ছে। অনলাইন নজরদারির ব্যাপারে এ ব্যাপারে জানতে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর পক্ষ থেকে সৌদি কর্তৃপক্ষ ও কাহাতানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে এ নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। টুইটার কর্তৃপক্ষের পক্ষেও এর একজন মুখপাত্র মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ম্যাককিনজির ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর, ওই তিন ব্যক্তির একজনকে গ্রেফতার করা হয়। দ্বিতীয় ব্যক্তি জানিয়েছে, সৌদি সরকার তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে ও তার মোবাইল হ্যাক করেছে। আর তৃতীয় ব্যক্তির অভিযোগ, তার টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিজেদের প্রতিবেদন ব্যবহার করে কাউকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়ে থাকেলে তা ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছে ম্যাককিনজি। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, কোনও সরকারের পক্ষ হয়ে ওই প্রতিবেদন তারা তৈরি করেনি। এক বিবৃতিতে ম্যাককিনজি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘সমালোচকদের শনাক্ত করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে কখনও দায়িত্ব দেয়নি। সরকারের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে, ম্যাককিনজি কখনও কোনও ব্যক্তিকে তার মতামতের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা সংক্রান্ত কাজে জড়িত হয়নি।’