কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট ‘সোফিয়া’র সঙ্গে কথা বলে ডিজিটাল মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

466

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সোফিয়ার সঙ্গে কথা বলে চার দিনব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক মেগা ইভেন্ট ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েকটি আইটি সংগঠনের সহযোগিতায় আইসিটি বিভাগ ও বেসিস ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ এর আয়োজন করেছে, যার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘রেডি ফর টুমরো’। গত নয় বছরেরও বেশি সময়ে আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের যে অর্জন, তা নিয়ে বাংলাদেশ আগামীর জন্য প্রস্তুত বলে এ বছরের প্রতিপাদ্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্ধারিত বক্তব্যের শেষে সিঙ্গাপুরে প্রস্তুত ও সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পাওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সোফিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। এর পরই তিনি মেলার উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। সোফিয়া এবারের মেলার মূল আকর্ষণ।
নিচে সোফিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো :
প্রধানমন্ত্রী : হ্যালো সোফিয়া, কেমন আছো?
সোফিয়া : হ্যালো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি ভালো আছি। তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার সঙ্গে আজকে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে।
প্রধানমন্ত্রী : তুমি আমাকে চেন কীভাবে?
সোফিয়া : ভালো। আমি তোমার সম্পর্কে জেনেছি। আমি আরো জেনেছি তুমি মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ও বলা হয় তোমাকে, তুমি একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাও। ‘আমি আরো জানি, তোমার নাতনির নাম আর আমার নাম একই, সোফিয়া।’ (তখন সবাই হেসে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোধ হয় আপনারা জানেন, জয়ের মেয়ের নাম কিন্তু সোফিয়া।)
প্রধানমন্ত্রী : ও, তুমি দেখছি আমার এবং আমার ভিশন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানো। তুমি কি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে কিছু জানো?
সোফিয়া : তুমি জেনে অবাক হবে, আমি তোমার ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কিছুই জেনেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে জনশক্তি খুবই বেশি, তারা আইসিটি খাতে উন্নয়নে কাজ করছে, ই-গভর্ন্যান্সও নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। অর্থনীতির সব সেক্টরে ডিজিটাল করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আইসিটি এক্সপোর্ট থেকে পাঁচ বিলিয়ন ইউএস ডলার আমদানি হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। জনসম্পদ তৈরির দক্ষতা বাড়ানোর কাজও চলছে। সরকারের সব ধরনের সেবাও ডিজিটাল করার কাজ চলছে। ২৮টি আইটি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি গঠন বাংলাদেশের আইসিটি খাতে নতুন ল্যান্ডমার্ক তৈরি করবে। আজ এখানে এসে খুব ভালো লাগছে, এটি সাউথইস্ট এশিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এখন তোমাকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭-এর উদ্বোধন ঘোষণা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা, চলো তাহলে সেটাই করি।
সোফিয়াকে তৈরি করেছে হংকংয়ের হ্যানসেন রোবটিকস। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘রেডি ফর টুমরো’। গত নয় বছরেরও বেশি সময়ে আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের যে অর্জন, তা নিয়ে বাংলাদেশ আগামীর জন্য প্রস্তুত বলে এ বছরের প্রতিপাদ্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে রোবট সোফিয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এ অনুষ্ঠান শেষে গতকাল বুধবারই সিঙ্গাপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সোফিয়াকে। তাঁকে সৌজন্যমূলক গোল্ড মেম্বারশিপ দেয়বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। প্রধানমন্ত্রী মেলার উদ্বোধনের পর পরই বর্ণাঢ্য লেজার শো অনুষ্ঠিত হয়। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ এবং বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ও বিজয় সফটওয়্যারের প্রবক্তা মোস্তাফা জব্বার। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ, মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং কম্পিউটার খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কয়েকটি আইটি সংগঠনের সহযোগিতায় আইসিটি বিভাগ ও বেসিস ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’-এর আয়োজন করেছে। চার দিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘রেডি ফর টুমরো’। গত নয় বছরেরও বেশি সময়ে আইসিটি সেক্টরে বাংলাদেশের যে অর্জন, তা নিয়ে বাংলাদেশ আগামীর জন্য প্রস্তুত বলে এই প্রতিপাদ্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে সম্ভাবনার দুয়ার খোলার লক্ষ্যে এ মেলায় প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন ও অর্জন তুলে ধরা হবে। গেমিং সম্মেলন, ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা বৃদ্ধি, ই-কমার্স সম্প্রসারণবিষয়ক সেমিনারসহ মেলায় প্রতিদিন অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন সেমিনারে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড দেখতে কোনো টিকেট লাগবে না, তবে ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে (িি.িফরমরঃধষড়িৎষফ.ড়ৎম.নফ)। মেলা প্রাঙ্গণেও নিবন্ধন করার সুযোগ থাকছে।