এবার ৮ ইউনিয়নে হবে না বোরো আবাদ : পানির স্তর ধরে রাখতে সিদ্ধান্ত বিএমডিএ’র
এবার আসন্ন বোরো মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮টি ইউনিয়নসহ রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর এবং নওগাঁর নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার উঁচু এলাকায় বোরো চাষাবাদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ। এর ফলে এবার গমের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘদিন যাবৎ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যাপকহারে উত্তোলনের ফলে পানির স্তর ভয়াবহ হারে নিচে নেম যাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের মতমতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বোরো আবাদের মতো বেশি সেচের ফসল চাষাবাদ না করে তুলনামূলক কম পানি লাগে, এমন ফসল হিসেবে গমসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। চাঁপাইনববাগঞ্জ বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশীদ জানান, বরেন্দ্র এলাকায় রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলো হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। অনেকগুলো নলকূপ পুনঃখনন বা পুনর্বাসন করতে হচ্ছে। কিন্তু ভূগর্ভে যথেষ্ট পানি না থাকায় ঠিক মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন- বর্তমানে আমাদের নলকূপগুলোর পানির স্তর হচ্ছে ১০০ ফুট, কিন্তু এই স্তরে ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বোরো ধানে সেচ লাগে ১১-১৮টি এবং সময় লাগে গড়ে ২ হাজার ঘণ্টা। অপরদিকে গমে লাগে মাত্র ২-৩টি সেচ। এদিকে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তাতে ভূগর্ভে পানিভরণ হয় না। এইসব এলাকায় গড় বৃষ্টির চাহিদা ১৩০০ মিলিমিটার। পক্ষান্তরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃষ্টি হয় গড়ে ১১০০ মিলিমিটার। এর মধ্যে ২০০ মিলিমিটার পানি গড়িয়ে চলে যায়। ফলে ৪০০ মিলিমিটার ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বরেন্দ্র অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন- যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের প্রফেসর কেন রুস্তন তার গবেষণায় মতামত দিয়ে বলেছেন, ‘উঁচু এলাকাগুলোকে টেকসই করতে হলে ভূগর্ভস্থ পানি পাম্পিং কমাতে পরিবর্তিত ফসল চাষাবাদ করতে হবে।’ নির্বাহী প্রকৌশল বলেন- এই এলাকা নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ডব্লিউএআরপিও’র মাধ্যমে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএমকে দিয়ে একটি গবেষণা কাজ সম্পন্ন করে। আইডব্লিউএম’র গবেষণায় বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের পানি সংকটের তীব্রতা অনুযায়ী বিকল্প হিসেবে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার করে পানির সমস্যা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব। এসব এলাকায় পানির সংকট থাকায় ফসল চাষাবাদের পরিবর্তন করে বোরো ধান চাষের পরিবর্তে গম, যব, ভুট্টা, সরিষা, ছোলা, মাসকালাই বিভিন্ন শাকসবজি ইত্যাদি ক্যাশক্রপ চাষাবাদ এবং বিভিন্ন হর্টিকালচারাল ক্রপ যেমন- আম, পেয়ারা, ড্রাগন, বরই, মালটা ইত্যাদির বাগান তৈরি করা যেতে পারে। নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশীদ বলেন- বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান মহোদয় এই পরিস্থিতি থেকে টেকই ইরিগেশন ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসতে এরই মধ্যে উপকারভোগী কৃষক ও বিএমডিএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফা মতবিনিময় করেছেন এবং মাঠের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কৃষকদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি বলেন- বোরো ধানে গড়ে সেচ লাগে ২ হাজার ঘণ্টা। পক্ষান্তরে গমে সেচ লাগে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা। তিনি আরো বলেন- বোরোতে ৯৮০ ঘণ্টা সেচের ব্যাপারে কৃষকদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নতুন করে গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ (আংশিক), নাচোল, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর, সাপাহার, পোরশায় কোনো গভীর নলকূপ পুনর্বাসন করা যাবে না। কেননা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা না গেলে এ এলাকায় মরুকরণ শুরু হবে। এদিকে কৃষকরা বলছেন, ধান চাষাবাদ করতে না পারলে আগামীতে ধানের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, বিএমডিএ কর্তৃক বোরো ধান চাষাবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার কারণে এবার গমের আবাদ বৃদ্ধি পাবে। তবে সিদ্ধান্তটি আগে পেলে ভালো হতো।