01713248557

এবার দুর্গার আগমন দোলায়, হাতিতে গমন যে কারণে

হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গার আগমনকে কেন্দ্র করে ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালে দুর্গাপূজা বেশ জমকালোভাবে আয়োজিত হয়ে। আশ্বিন মাসে প্রায় দশদিন ধরে দুর্গাপূজার উৎসব পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় মহাষষ্ঠী (আজ ৯ অক্টোবর) থেকে। চলতি বছরে দুর্গাপূজার মহালয়া ছিল গত ২ অক্টোবর, বুধবার। এরপর মহাপঞ্চমী ছিল গতকাল ৮ অক্টোবর! আজ বুধবার, ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। সপ্তমী পড়ছে ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। অষ্টমী তিথি ১১ অক্টোবর, শুক্রবার। ১২ অক্টোবর পড়েছে নবমী তিথি, দিনটি শনিবার। এরপর দশমী তিথি ১৩ অক্টোবর ২০২৪, রোববার।

দেবী দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন ও তার ফলাফল নিয়ে বাঙালি সমাজে বহু কথা প্রচলিত আছে। দেবী দুর্গা ও তার পুত্র-কন্যার নিজস্ব বাহন থাকলেও আগমন ও প্রস্থানের বাহনের কথা আলাদা করে পঞ্জিকায় উল্লেখ থাকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারণ করে মর্তলোকে সারা বছর কেমন কাটবে। প্রতি বছর দুর্গার আগমন ও প্রস্থান সাধারণত একই বাহনে হয় না। যদি কোনো বছর হয়‚ তবে তা খুবই অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এই বছর দুর্গার আসা ও যাওয়া দুটি ভিন্ন বাহনে হবে।

পঞ্জিকা অনুসারে পূজার সপ্তমীতে দেবীর আগমন হয়, আর গমন হয় দশমীতে। এই দুই দিন সপ্তাহের কোন বারে পড়ছে, তার উপরেই নির্ভর করে দেবীর আসা যাওয়ার বাহন। শাস্ত্র অনুযায়ী, সপ্তমী রোববার বা সোমবারে হলে দেবীর বাহন হবে গজ বা হাতি। সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবারে হলে দেবীর বাহন হবে ঘোটক বা ঘোড়া। সপ্তমী বৃহস্পতি বা শুক্রবারে হলে দেবীর বাহন দোলা বা পালকি। সপ্তমী বুধবারে হলে দেবীর বাহন নৌকা।
একইভাবে, দশমী রবি বা সোমবার হলে দেবীর বাহন গজ। দশমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। দশমী বৃহস্পতি বা শুক্রবারে হলে দেবীর গমন হবে দোলা বা পালকিতে। আর দশমী বুধবারে হলে নৌকায় করে কৈলাসে ফিরবেন দেবী।

এবার দুর্গার বাহন : এই বছর ১০ অক্টোবর সপ্তমী পড়েছে বৃহস্পতিবার। তাই দুর্গার আগমন দোলা বা পালকিতে। আগামী ১৩ অক্টোবর রোববার পড়েছে বিজয়া দশমী। মা দুর্গা পুত্র-কন্যা নিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন গজ বা হাতির পিঠে আসীন হয়ে। শাস্ত্রমতে, দুর্গা যদি পালকিতে করে আসেন, তাহলে ফল ‘দোলায়াং মকরং ভবেৎ’ অর্থাৎ মহামারি, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যু। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য। দেবী ফিরবেন গজ বা হাতিতে, শাস্ত্র মতে যা দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। দেবীর আগমন বা গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পায় মর্তলোকের অধিবাসীগণ। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ।

দুর্গার অন্য বাহনের মাহাত্ম্য: দেবী যদি ঘোড়ায় চড়ে আসেন বা বিদায় নেন তবে তার ফল ‘ছত্র ভঙ্গ স্তুরঙ্গমে’ অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিকস্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এক কথায় ‘ছত্রভঙ্গম’। দেবীর আসা বা যাওয়া নৌকায় হলে ফল ‘শস্য বুদ্ধিস্তথাজলম’ অর্থাৎ প্রবল বন্যা ও খরা দেখা যায়। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া সূচিত হয়। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতি বর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা যায়।