এবার গোপালভোগ ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমের জিআই পণ্য স্বীকৃতি দাবি

106

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলার ক্ষিরসাপাত আম এর আগে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া অতিসম্প্রতি আমের রাজা ফজলি যৌথভাবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়ছে। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে ল্যাংড়া ও আশ্বিনার জন্য আবেদন করা আছে। এবার এই দুটি আমের সঙ্গে গোপালভোগের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য নতুন করে আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বিষয়ক এক সভায় এমন দাবি উঠে আসে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক শামসুল ইসলাম টুকু, বিশিষ্ট গবেষক জাহাঙ্গীর সেলিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি এরফান আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি শহীদুল হুদা অলক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি আবু বাক্কার সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম মানিক, অ্যাডভোকেট আবু হাসিব, আমচাষি আহসান হাবিব, ইসমাইল খান শামীমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা আমসম্পদকে রক্ষায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পক্ষে আশ্বিনা ও ল্যাংড়া আমের জিআই স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র। এরপর প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমের উৎপাদন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য বিবেচনায় নিয়ে এই দুটিসহ গোপালভোগ আমের জিআই সনদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে দ্রুত প্রদান করার দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, আমের উৎপাদন, সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জিআই সনদ।
সভায় জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমের বাজার সম্প্রসারণ ও প্রসারে এবছর জেলায় আম উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আশ্বিনা ও ল্যাংড়া আমের জিআই সনদের জন্য করা আবেদনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জেলার আমসম্পদের উন্নয়নে সবাইকে একসাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমের উন্নয়নে কৃতিত্ব ও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। আমসম্পদের উন্নয়নে জেলার সকল দপ্তরকে নিয়ে সভা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসময় তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আম মেলার কথা এবং আম বিষয়ে পর্যটনমন্ত্রীকে দাবি-দাওয়ার কথাও তুলে ধরেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারের নিকট আমের জন্য প্রণোদনা দেয়ার অনুরোধ করা হবে। জেলায় ৪০ কেজি থেকে ৫২ কেজিতে এক মণ হিসেবে আম বিক্রি নিয়ে নানা সমস্যা দূর করতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোতে যাতে একই পরিমাণ ওজনে আম ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, সে বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে আবেদন করার কথাও উল্লেখ করেন। অনেক জায়গায় ৪০ কেজি বা ৪২ কেজির পরিবর্তে ৫২-৫৫ কেজি পর্যন্ত নেয়া হয়। এটা করতে দেয়া হবে না। কৃষকদের অধিকার ও প্রাপ্যতা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেললে তাকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ক্ষিরসাপাত ও ফজলি আমের জিআই পেলেও যতদিন ট্যাগ লাগানো যাবে না, ততদিন সুফল মিলবে না। আলাদাভাবে ডিজাইন করে লোগো করা খুবই জরুরি। আমের রাজধানী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিংহভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। এখানে একক বাগান নেই বললেই চলে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিকল্পিত একক বাগান করা গেলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষিমন্ত্রী ও পর্যটনমন্ত্রীর নিকট আমসম্পদের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। বিদেশে আম রপ্তানিতে নানা সমস্যা ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। জেলায় আম উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে আম পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমের আঁটি থেকে তেল উৎপাদনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম মানিক বলেন, কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন করা হয়। চলতি বছর হয়তো ফলন কম হওয়ায় তা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন হতে পারে। বর্তমানে শুধুমাত্র বিদেশে আম রপ্তানির জন্য নিরাপদ আম উৎপাদন করা হয় না। বর্তমানে দেশে ১৮ কোটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর আম উৎপাদন করাও জরুরি। তাই আমরা পুরোপুরি বিদেশে আম রপ্তানি থেকে বেরিয়ে এসেছি।