এবার এনজিও’র ঋণও যুক্ত হচ্ছে সিআইবিতে

219

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মত এখন থেকে এনজিও থেকে নেওয়া মেয়াদি ঋণও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি’তে (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যেই এসব ঋণের ডাটাবেইজ তৈরির কাজ শুরু করেছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। তবে এ কাজ শেষ করতে বছর দুয়েক সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। নতুন এ উদ্যোগ আর্থিক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ ও ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে সিআইবি বিষয়ে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে শর্তগুলো মার্চ মাস থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ন্যূনতম এক টাকার ঋণ নিলেও তার তথ্য সিআইবির নির্দিষ্ট করা ঋণ তথ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের আগে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সাধারণ ঋণের তথ্য সিআইবিতে দিতে হতো। আর ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া ১০ হাজার টাকা হলেই সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি ডাটা বেইজে দিতে হতো। ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে ঋণ নিলেই গ্রাহকের সকল তথ্য সিআইবিকে দিতে হয়। দেশে কার্যরত সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে আগের মাসের ঋণের তথ্য নির্ধারিত ডাটাবেইজে আপলোড (অন্তর্ভুক্ত) করে থাকে। এক গ্রাহক একবার খেলাপি হলে নতুন করে ঋণ নিতে পারে না। কারণ, নতুন ঋণ বিতরণের আগেই সিআইবির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। ঋণ খেলাপিরা কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তাই এনজিওগুলোতে খেলাপিরাও এখন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জানা গেছে, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করে ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাংকের পাশাপাশি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণখেলাপিদেরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে সিআইবিতে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ গ্রহীতাদেরও তথ্য ভা-ার গড়ে তোলা হয়। ওই সময়ে সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ও কৃষিঋণ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া যেকোনো ঋণ বা তার কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি খেলাপি বলে গণ্য হবেন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখের ৭ দিন আগে প্রার্থীকে ঋণখেলাপির দুর্নামুক্ত হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এনজিও’র ঋণখেলাপিরা যাতে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য সিআইবি হালনাগাদ করার কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত দিক তৈরি করা হচ্ছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এমআরএ কাজ করছে। তাদের অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হলে আইনগত কাঠামো তৈরি করা হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে প্রায় এমআরএ নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা গ্রাম ৮ শ”। এসব এনজিওর মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করে থাকে। এখন তারা বড় অঙ্কের ঋণও দিচ্ছে। এমআরএ’র সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ও ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখ। দেশে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম যখন শুরু হয় তখন এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণযোগ্য তহবিলে শতভাগ অবদান ছিল দাতা সংস্থাগুলোর। এখন সে অবস্থার অবসান হয়ে প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এখন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিলের বড় অংশের যোগান দিচ্ছে দেশের কার্যরত ব্যাংকগুলো। বেড়েছে গ্রাহক সংখ্যা। আর একসময় শুধু দরিদ্র শ্রেণির মানুষ এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিলেও এখন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছে।