এখনও সু চিই মিয়ানমারের শেষ ভরসা : বিল রিচার্ডসন

455

মিয়ানমারের নেত্রীর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেল থেকে সরে গেলেও মার্কিন কূটনীতিক বিল রিচার্ডসন মনে করেন, একমাত্র অং সান সু চিই পারেন সেনাবাহিনীকে থামাতে। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে নিউ মেক্সিকো রাজ্যের এই সাবেক গভর্নর টেলিফোনে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাকারে সু চিকে বর্ণনা করেছেন ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু’ হিসেবে।
রিচার্ডসনের ভাষায়, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে বেসামরিক নেতা হিসেবে স্টেট কাউন্সেলর পদে আসার পর থেকে সু চির মধ্যে এক ধরনের ‘আত্মরক্ষামূলক মানসিকতা’ তৈরি হয়েছে। তারপরও পশ্চিমা সরকারগুলোর উচিত সু চির পাশে থাকা।
ক্লিনটন সরকারের সাবেক এই কেবিনেট সদস্য রয়টার্সকে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো, মানবাধিকার সংগঠনগুলো, জাতিসংঘ আর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক খুব খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমার মনে হয়, সু চি এটা নিজের গায়ে টেনে এনেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে সমালোচনা, আমি মনি করি তা তার জন্য ভালো হতে পারতৃ কিন্তু তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। তিনি দেশের ভেতরেও খুব একটা কোথাও যান না। আমার মনে হয়, তিনি নিজের চারপাশে তিনি একটি বলয় গড়ে তুলেছেন। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সু চির গঠিত দশ সদস্যের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেল থেকে গত বুধবার পদত্যাগ করেন রিচার্ডসন। তিনি সঙ্কট নিরসনে সু চির নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং আন্তর্জাতিক ওই পরামর্শক প্যানেলকে বলেন ‘লোক দেখানো’, সরকারের ‘চিয়ারলিডিং স্কোয়াড’। অন্যদিকে সু চির দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রিচার্ডসনের মধ্যে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিপ্রায় দেখা যাওয়ায় তাকে সরে যেতে বলা হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে গত ২৫ অগাস্ট নতুন করে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শূরুর পর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য গতবছর মিয়ানমারের পাঁচজন এবং পাঁচজন বিদেশিকে নিয়ে দশ সদস্যের এই পরামর্শক প্যানেল গঠন করে সু চির সরকার।
বিল রিচার্ডসন বলেন, আমি মনে করি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দোষ দেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আর আমার বিশ্বাস, সু চিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সেনাবাহিনীকে অবস্থান বদলে বাধ্য করতে পারেন। তার উচিত সেই কাজটা শুরু করা। গত সপ্তাহে ওই প্যানেলের সদস্যদের সঙ্গে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চির বৈঠক ছিল। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে খবর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি রিচার্ডসন সেখানে তুললে সু চির সঙ্গে তার বাদানুবাদ হয়। রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়া সো ও রোহিঙ্গা সঙ্কটের খবর সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। ইয়াঙ্গনে পুলিশ কর্মকর্তাদের এক ডিনারের আমন্ত্রণে যাওয়ার পর গত ১২ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গোপন নথিপত্র ছিল তাদের কাছে।
রিচার্ডসন রয়টার্সকে বলেন, ওই প্রসঙ্গ তোলায় সু চি ক্ষেপে ওঠেন এবং সাফ জানিয়ে দেন, সাংবাদিকদের নিয়ে ওই ঘটনা পরামর্শক প্যানেলের দেখার বিষয় নয়।
মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্যানেলের সদস্যদের তিন দিনের বৈঠকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তাও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেন এই মার্কিন কূটনীতিক।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, ১৯৮০ সালের পর থেকে তিনি সু চিকে চেনেন। মিয়ানমারের নেত্রীকে তিনি শ্রদ্ধাই করতেন। কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সু চির ‘নৈতিক অবস্থানে’ তিনি সততা দেখতে পাননি। তার ভাষায়, পরামর্শক প্যানেলের ‘কোনো ভালো পরামর্শ’ সু চি শুনতে চাননি।