এক লাখ ২০ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গলো

69

ক্রমাগত পৃথিবী উষ্ণ হয়ে উঠছে। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে চলতি জুলাই ‘কার্যত নিশ্চিতভাবে’ বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হওয়ার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। উষ্ণতার বিচারে এটি ২০১৯ সালের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত ১ লাখ ২০ হাজার বছরের মধ্যে এটি হবে সবচেয়ে উষ্ণ মাস। তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

তাদের ধারণা, চলতি বছর হতে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। গতকাল শুক্রবার বিবিসি এ খবর জানায়।

ক্রমাগত পৃথিবী উষ্ণ হয়ে ওঠা নিয়ে সচেতন মানুষের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ। এ উষ্ণতা আরো বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, পৃথিবী ‘বৈশ্বিক ফুটন্তকরণের যুগে’ প্রবেশ করতে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা একমত যে, মূলত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এ অতিরিক্ত উষ্ণতা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনকে মানব ‘অস্তিত্বের জন্য হুমকি’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন কেউ অস্বীকার করতে পারেন না।

তবে জুলাই ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হওয়া নিয়ে বিস্মিত নন গবেষকরা। কারণ, কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ বিষয়ে নানা লক্ষণ তারা দেখতে পাচ্ছিলেন।

ইউরোপের জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণবিষয়ক সংস্থা কুপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসেই বিশ্বে সবচেয়ে উষ্ণ দিন দেখা গেছে। গত ৬ জুলাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ দিন।

এ মাসের ২৩ দিন ছিল চরম উষ্ণ। জুলাইয়ের প্রথম ২৫ দিনের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ২০১৯ সালের রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেশি।

ইউনিভার্সিটি অব লিপজিগের ড. কার্স্টেন হউস্টেইন হিসাব করে দেখেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে ২০২৩ সালের জুলাই মাস অন্য বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ হবে। তিনি নিশ্চিত, শেষের তিন-চার দিন যদি অপেক্ষাকৃত শীতলও হয়, তাতে জুলাইকে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হওয়া থেকে ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, এ রকম উষ্ণ মাস খুঁজতে আমাদের হাজার হাজার বছর আগের পৃথিবীতে যেতে হবে।

কেন ঘটছে এসব উদ্বেগজনক রেকর্ড? গবেষকরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছেন, এগুলোর জন্য প্রধানত দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গত ধোঁয়া। ওয়ার্ল্ডস মেট্রোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের মহাসচিব অধ্যাপক পেট্টেরি তালাস বলেন, জুলাইতে যে চরম আবহাওয়ার কারণে লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন, সেটি জলবায়ু পরিবর্তনের রূঢ় বাস্তবতা। এটা একটা ভবিষ্যদ্বাণীও। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুততর সময়ের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাইয়ে যে উষ্ণ দেখেছে বিশ্ববাসী, চলতি বছরেই এটাই শেষ কথা নাও হতে পারে। গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির সঙ্গে মহাসাগরে তাপীয় প্রবাহ এল নিনোর প্রভাবও আছে। এল নিনো যদিও প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক দশকে এর শক্তি বেড়েছে। এর জেরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। এতে ২০২৩ অথবা ২০২৪ সাল হতে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলমান এল নিনোর সম্পূর্ণ প্রভাব আমরা এখনো মোকাবিলা করিনি। এর প্রভাবে এরই মধ্যে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে দাবানলে পুড়ে ছাই হয়েছে মাইলের পর মাইল বনাঞ্চল। ইতালি ও গ্রিসের অনেক অঞ্চলে দাবানল দেখা দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব দাবানলের ঘটনাও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রচণ্ড গরমে ভুগছে মানুষ।

চলমান প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিৎসোতাকিস রয়টার্সকে বলেন, তার দেশের মধ্যাঞ্চলে প্রবেশ করেছে দাবানল। এতে অনেক খামার ও কারখানা পুড়ে ভষ্ম হয়ে গেঠে। গ্রিসের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবশ্যই বাড়তি কিছু করতে হবে। দেশটিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব দাবানলে অন্তত চারজনের প্রাণ গেছে। সব মিলিয়ে ইউরোপে ও আফ্রিকার আলজেরিয়ায় দাবানলে অন্তত ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।