উত্তর কোরিয়ার ‘নতুন ধরনের’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা

442

আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এটি ‘নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র’ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের শহর কুসং থেকে গত রোববার ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপ করা হয় বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় পৌঁছায় এবং ৭০০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল এবং জাপানের মধ্যবর্তী সাগরে গিয়ে পড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপের পর সেটি ৩০ মিনিট উড়ে গিয়ে সাগরে পড়ে বলে জানায় জাপান। গত ফেব্রুয়ারিতে কুসং থেকে আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। সেবারের চাইতে এবারের ক্ষেপণাস্ত্রটি বেশি দূরত্বে এবং বেশি উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসেফিক কমান্ডার বলেন, এটা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ছিল। কিন্তু সেটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ছিল না’। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী টমমি ইনাডা বলেন, খুব সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্রটি নতুন ধরনের। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালাতে সক্ষম আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
রয়টার্স জানায়, এর আগে উত্তর কোরিয়া যেসব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, রোববারের ক্ষেপণাস্ত্র সেগুলো থেকে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে উত্তর কোরিয়ার সফল হওয়ার লক্ষণ।
হার্ভার্ডের অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক জনাথন ম্যাকডোওয়েল বলেন, “যদি ওই প্রতিবেদন সঠিক হয় তবে এই পরীক্ষা নতুন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের কথাই বলছে, যেটা অধিক দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। নিশ্চিতভাবেই এটা উদ্বেগজনক।
উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গত মাসেও তারা দুইটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যদিও দুইবারই ব্যর্থ হয়েছে।
শক্তি প্রদর্শণের জন্য কোরীয় উপদ্বীপে একটি নৌ-স্ট্রাইক গ্রুপ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই গ্রুপে একটি বিমানবাহী রণতরী এবং একটি সাবমেরিনও রয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নৌ-বাহিনীও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহড়ায় অংশ নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন শপথ গ্রহণের পরপরই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসে কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যা সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এজন্য প্রয়োজনে তিনি পিয়ংইয়ং যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন। তার মাত্র সপ্তাখানেকের মধ্যেই উত্তর কোরিয়ার নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবেই তাকে চাপে ফেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুন নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘উসকানি’ বলে বর্ণনা করেছেন।
মুনের মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যদিও উত্তর কোরিয়া সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার দরজা খোলা আছে। তবে এজন্য উত্তর কোরিয়াকে তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা হলেই কেবলমাত্র আলোচনা সম্ভব। নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পর দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান কিম-ওয়ান-জিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ.আর. ম্যাকমাস্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়, তারা উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রম আটকাতে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপান নয় বরং রাশিয়ার কাছে গিয়ে পড়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার ভূখ-ের খুব কাছে গিয়ে পড়েছে- বাস্তবে জাপানের চাইতে রাশিয়ার কাছে। তাই রাশিয়া খুশি হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।