ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন থাকছে না একাদশ সংসদ নির্বাচনে থাকছে না একাদশ সংসদ নির্বাচনে

486

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির বিরোধিতার মুখে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এজন্য রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ইভিএম প্রসঙ্গটি বাদ রেখেই ইসি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে। এতে নিশ্চিত করে বলা যায়, আর আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এখনও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবুও প্রযুক্তিটি ব্যবহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ নানামহলের দাবির মুখে ইসি বলে এসেছে, সব দলের ঐকমত্য থাকলে ইভিএম ব্যবহারে ইসি ব্যবস্থা নেবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও বলেছেন, ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি কমিশনের রয়েছে। সবার সায় থাকলে একাদশ সংসদে তা সম্ভব। কিন্তু কেউ আপত্তি করলে এটা ব্যবহার করা হবে না। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনে সফলভাবে ইভিএম ব্যবহার হলেও কারিগরি ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন কমিশন-বুয়েট দ্বন্দ্বে এর ব্যবহার আটকে যায়। দশম সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছিল কাজী রকিব কমিশন। পরে তিনি ঘোষণা দেন, তাতে ইভিএম ব্যবহার করবে না। কাজী নূরুল হুদার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে গত ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’ চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোট আয়োজনের যে প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল, তাতে ডিজিটাল ভোটিং পদ্ধতি হিসেবে ইভিএম নিয়ে প্রস্তুতির জন্যও সময় রাখা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৪০ হাজার ভোটেকেন্দ্রের তিন লাখেরও বেশি ভোট কক্ষে সমপরিমাণ ইভিএম লাগে। সেই সঙ্গে ঝুঁকি এড়াতে বাড়তি যন্ত্রও রাখতে হয়। প্রযুক্তিটির বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে সবার সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিলেন সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা। তার মত হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের জন্য ইভিএম তৈরি না, আগে এটির সর্বজনগ্রাহ্যতা তৈরি করতে হবে, যা এখনও হয়নি। এর আগে ইভিএমের বিপক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, ভোট দেওয়া থেকে জনগণকে বঞ্চিত করার কৌশল হিসেবে আগামি নির্বাচনে ব্যালটের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে নূরুল হুদার কমিশন উদ্যোগী হলেও জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহারের আগে রাজনৈতিক ‘ঐকমত্য’ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেছেন, আগের কমিশনগুলো ইভিএম নিয়ে কাজ করেছে; সমস্যা রয়ে গেছে। ভারতেও বিতর্ক চলছে। এ অবস্থায় নতুন কমিশনকে সতর্কভাবে এগোতে হবে। রাজনৈতিক দল ও সরকার চাইলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব বলে গত ১১ মে এক অনুষ্ঠানে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বললেও পরবর্তীতে এ নিয়ে ধীরে চলা নীতির কথা জানান তিনি। সিইসি বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে (ইমিডেয়েটলি) ইভিএম ব্যবহার করার সুযোগ নেই। ছোট ছোট নির্বাচনে পরীক্ষা করতে হবে ব্যবহার করা যাবে কিনা। তার আগে রাজনৈতিক দলগুলো এটা চায় কিনা জানতে হবে। আমরা কারও ওপর এটা চাপিয়ে দিতে চাই না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি পেলে এবং সরকার চাইলে আগামি সংসদেও ইভিএম ব্যবহার সম্ভব। এ জন্যে বড় ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ নিতে হবে। এ অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আসছে সংলাপের আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে ইভিএম বাদ দেওয়া হয়। ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, সংলাপের এজেন্ডায় যেহেতু নেই, সেহেতু সংসদে (সংসদ নির্বাচনে) ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম আর ব্যবহার হবে না; সেক্ষেত্রে আগামীর জন্য সুপারিশ করা যাবে। তবে স্থানীয় সরকারের ছোট ছোট নির্বাচনে তা ব্যবহার হতে পারে। আর ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, সিইসি মহোদয় বরাবরই বলে এসেছেন, কারো আপত্তি থাকলে ইভিএম নয়। এখন একটি বড় দল এর বিরোধিতা করে আসছে। সেক্ষেত্রে আগামি সংসদে তো আর ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। আমরাও রোডম্যাপে ইভিএম নিয়ে আলোচনার বিষয়টি ড্রপ করেছি। ইসির সংলাপে কোনো রাজনৈতিক দল ও অংশীজন ইভিএমে ভোটের বিষয়ে দাবি জানালেও তা আর আমলে নেওয়া হবে না বলে ‘সাফ’ জানিয়ে দেন ইসি সচিব।