ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না: যৌথ বিবৃতিতে জি৭

কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক জোট জি৭ একটি যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতে ‘উত্তেজনা কমানোর’ আহ্বান জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার। কানাডায় ৫১তম শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বৈঠকে থাকা জি-৭ দেশগুলো তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আরো বলা হয়েছে, ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না’। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা নিশ্চিত করছি, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে স্পষ্ট করে বলেছি, ইরান কখনই পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না।” “আমরা জোর দিয়ে বলছি যে, ইরানি সংকটের সমাধানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে শত্রুতা হ্রাস পাবে, যার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতিও অন্তর্ভুক্ত।” মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই ফিরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিলম্বে তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প তার মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করা উচিত ছিল। আমি তাদের চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছিলাম। এটা লজ্জার, আর মানব জীবনের ক্ষতি। সাধারণভাবে বলছি: ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে পারবে না। আমি এটি বারবার বলেছি। সবাই জরুরিভিত্তিতে তেহরান খালি করে দিন।”

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে মাখোঁ সাংবাদিকদের জানান, “এই প্রস্তাবটি আলোচনা শুরু করার জন্য।”

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফরাসি ভাষায় বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাত থামাতে সক্ষম হয়, তা খুবই ভালো বিষয় এবং ফ্রান্স তা সমর্থন করবে এবং আমরা এ জন্য শুভকামনা জানাই। তিনি আরো বলেন, “উভয় পক্ষেরই হামলা বন্ধ করা উচিত, বিশেষ করে নিরীহ জনসংখ্যার ওপর সমস্ত হামলা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া জরুরি।” এ ধরনের কোনো হামলা কখনোই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে একদিন আগেই ফিরছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবিলম্বে তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইরান আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিলে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এটা দুঃখজনক ও অনর্থক প্রাণহানি। পরিষ্কার করে বলছি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করতে পারে না। আমি বারবার এটা বলেছি!”

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘তেহরান খালি করার’ আহ্বানকে “ভয়াবহ ও চরমভাবে উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্ক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’-এর নির্বাহী সহসভাপতি ম্যাথিউ ডাস।

তিনি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা আসলে ভয়াবহ। তেহরান একটি মহানগরী যেখানে ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। এই বিশাল জনসংখ্যাকে হঠাৎ করে সরিয়ে নেওয়া এক কথায় অসম্ভব। তেলের সংকটের মধ্যে মানুষকে পায়ে হেঁটে পালাতে হবে- এটা এক ভয়ঙ্কর কল্পনা।”

দুর্ভাগ্যবশত, ডোনাল্ড ট্রাম্প যা বলছেন তা কতটা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত তা জানা কঠিন… তবুও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন রাষ্ট্রপতির এই ধরণের ভাষা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের সকলের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত,” তিনি বলেন। ডাস আরো বলেন, “ট্রাম্প যা বলেন, তার কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া উচিত সেটা বোঝা কঠিন হলেও, এমন ভাষা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে শোনা গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমাদের সবার সতর্ক হওয়া উচিত।” এর আগে ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে বলেন, “সবাই এখনই তেহরান ছেড়ে চলে যাও!”

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধের মধ্যে ট্রাম্প কেন এমন বিবৃতি দিলেন সেটি স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য হলো ইরানি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যেকোনো চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা, তার মনে যে চুক্তিই থাকুক না কেন।

ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনা ‘ফোরদো’-তে হামলা চালানোর ক্ষমতা একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল হেরজোগ। তার এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে হেরজোগ বলেন, “ফোরদো একটি গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা। যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই কেবল এমন বোমা আছে যা সেখানে আঘাত হানতে পারে।” তিনি আরো বলেন, “ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রতিরোধে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।” ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি ইরানের একটি পাহাড়ি অঞ্চলে গভীরভাবে ভূগর্ভে অবস্থিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মন্তব্য ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হতে পারে।  এদিকে, ইরান এখনো বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।