ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে ইরান 

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোতে ৬ হাজারের বেশি নতুন সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন ও ইতোমধ্যে স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজের কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা করছে ইরান। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সিকে (আইএইএ) ইরান এ কথা জানিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর সংস্থাটির একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। আইএইএ’র প্রতিবেদনে ইরানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিস্তারিত লেখা রয়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আইএইএ’র ৩৫টি দেশের বোর্ড অফ গভর্নরদের পাস করা একটি প্রস্তাবের জবাবে ইরান এই ঘোষণা দিয়েছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা বাড়ানোর অর্থ হলো ইরান আরও দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে, যা পরমাণু অস্ত্র প্রসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য অস্বীকার করলেও ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমারা। উল্লেখ্য, এটি অস্ত্রমানের প্রায় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধতার কাছাকাছি। পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিটি দেশই এই বিশুদ্ধতার সীমা অতিক্রম করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন সেন্ট্রিফিউজগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় ৫ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এটি ৬০ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। বিশেষ করে ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে এই নিম্ন বিশুদ্ধতার পরিকল্পনাটি ইরানের পক্ষ থেকে একটি সমঝোতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেহেতু তারা ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজছে। তবে পরবর্তীতে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা পরিবর্তন করা সহজ। বর্তমানে নাতানজ ও ফোর্দোতে দুটি ভূগর্ভস্থ এবং নাতানজের একটি ভূপৃষ্ঠস্থ পরীক্ষামূলক কেন্দ্রে ১০ হাজারের বেশি সেন্ট্রিফিউজ পরিচালনা করছে তেহরান। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান ১৬০টি মেশিনের বেশি নিয়ে গঠিত ৩২টি নতুন ক্যাসকেড স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ও এক হাজার ১৫২টি উন্নত আইআর-সিক্স মেশিন নিয়ে একটি বিশাল ক্যাসকেড তৈরি করবে। এছাড়া, পরিকল্পিত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ইতোমধ্যেই স্থাপিত সেন্ট্রিফিউজগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তবে এগুলো চালু করতে ইউরেনিয়াম ফিডস্টক ব্যবহার করতে হবে, যা এখনও কার্যকর করা হয়নি বলে আইএইএ নিশ্চিত করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টে নতুন ক্যাসকেড স্থাপনের পর তাদের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে এমন সব তথ্য তেহরানকে জানিয়েছে আইএইএ। ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের বিষয়ে বাড়তি সতর্ক অবস্থানে আছে সংস্থাটি। কারণ এটি একটি পাহাড়ের মধ্যে নির্মিত ও এখানে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চলছে। নাতানজেও একই মাত্রার সমৃদ্ধকরণ করা হচ্ছে।