Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

আসলে আমরা কোথায় যাচ্ছি

নন্দিত সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। তবে কখনোই বাণিজ্যিক গানে গা ভাসাননি। আপোশ করেননি মানের সঙ্গে। আর তাই শ্রোতারা সবসময় মানসম্পন্ন গানই পেয়েছেন এ শিল্পীর কাছ থেকে। মূলত বাণীনির্ভর গানই বেশি করেছেন তিনি।
আর তাইতো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দীর্ঘ সময় ধরে সংগীত জগতে সামিনা চৌধুরীর তুলনা কেবল তিনি নিজেই। এখনও নিয়মিত গাইছেন এ শিল্পী। সব মিলিয়ে কেমন আছেন? সামিনা চৌধুরী বলেন, সত্যি বলতে গত কয়েকদিন ধরে একদমই ভালো নেই। কারণ, ঢাকার প্রিয় মেয়র আনিস ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন কল্পনায়ও আসেনি। আমি ভাষা পাচ্ছি না আসলে। তিনি ছিলেন আমাদের সবার অভিভাবক। বিশেষ করে শিল্পীদের পাশে তিনি সবসময় থাকতেন। তাদের খোঁজ-খবর নিতেন। তারই ধারাবাহিকতায় কোনো শিল্পী যেন আর দুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় না থাকেন সেজন্য ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ গড়েছিলেন আনিস ভাই। সেখান থেকে লাকী আখান্দ চাচা, আলাউদ্দিন আলী চাচা, শাম্মী আখতারসহ অনেক শিল্পীকে সহায়তা দেয়া হয়েছিল। তিনি মানুষ নিয়ে ভাবতেন। শুধু ভাবতেনই না, কাজও করতেন মানুষের জন্য। আমরা ঢাকাবাসী যারা আছি তারা অভিভাবক হারালাম। দোয়া করি আল্লাহ যেন আনিস ভাইকে জান্নাত দান করেন। এখন ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে আপনার? সামিনা চৌধুরী বলেন, এখন শো-র সংখ্যা আগের চেয়ে বেশি। যেহেতু শীত, স্টেজের মৌসুম। তবে আমি বেছে বেছে শো করছি এখন। নতুন গান কি করছেন? সামিনা চৌধুরী বলেন, নতুন গান করছি, তবে কম। কথা-সুর পছন্দ হলেই কেবল করছি। নচিকেতার সুরে একটি অ্যালবামের কাজ করছি। এর কাজ শেষের দিকে। এটা আমার ও ফাহমিদার দ্বৈত অ্যালবাম। আশা করছি গানগুলো শ্রোতাদের ভালো লাগবে। যেহেতু নচিকেতা দা আমার খুব পছন্দের শিল্পী ও সুরকার। ব্যতিক্রম কিছুই পাবেন শ্রোতারা। এই সময়ে ডিজিটালি গান প্রকাশ হচ্ছে। সিডি মাধ্যম প্রায় বিলুপ্ত। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? সামিনা চৌধুরী বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যম পরিবর্তন হতেই পারে। তবে সিডির আবেদন কখনোই ডিজিটালি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, সিডিতে গান সংরক্ষণ হয়। এটা একটা ডকুমেন্ট। তারপরও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তো চলতে হবে। সঠিক নিয়মের মধ্যে যদি ডিজিটালি গান প্রকাশ ও বাজারজাত হয় সেটা ভালো। বর্তমান সময়ের গান নিয়ে আপনার অভিমত কি? কেমন লাগে? সামিনা চৌধুরী বলেন, এই প্রশ্ন নিজেকেই মাঝে মধ্যে করি। আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি! মাঝে মধ্যে অবাক লাগে। এখন তো সবাই গায়ক-গায়িকা বনে যাচ্ছেন। গান গাওয়াটা এখন খুব সহজ! শেখা নেই, জানা নেই, কণ্ঠ নেই। কিন্তু নিজেকে গায়ক-গায়িকা হিসেবে জাহির করছেন অনেকে। আমি সবার কথা বলছি না। মেধাবী শিল্পীরাও আছেন এখন। তবে মেধাহীনই বেশি। যার কারণে কষ্টও লাগে খুব। সবাইকে কেন শিল্পী হতে হবে? যার যেটা কাজ সেটা নিয়ে থাকলেই কিন্তু হয়। ইদানীং সবাই যেন জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটছে। রাতারাতি জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য যা খুশি করছে। কোয়ালিটি থাকলে জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটতে হয় না। আর তা না থাকলে শত চেষ্টা করেও লাভ নেই। এ বিষয়ে সামিনা চৌধুরী আরও বলেন, সচেতন হতে হবে সবাইকে। আমি নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চাই। সে অনুযায়ী নিজেকে কতটুকু তৈরি করছি সেটাই বড় ব্যাপার। আমরা যখন গান শুরু করি তখন ভালোবাসা থেকে গাইতাম। আর শেখার জন্য কি না করতাম! এখনও নিজেকে শিক্ষার্থী মনে করি। আমি প্রতিনিয়তি শিখেছি, শিখছি ও শিখতে চাই। কিন্তু এখন যার যা ইচ্ছে করছে। এভাবে তো প্রকৃত শিল্পী হওয়া যায় না। আমি বার বার একটি কথা বলি, গাইলেই গায়ক ও গায়িকা হওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত শিল্পী হয়ে ওঠা যায় না। সেটার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আপনার উপদেশ কি থাকবে তরুণ প্রজন্মের জন্য? সামিনা চৌধুরী বলেন, এখন গানটা সহজ হয়ে গেছে। সে কারণে যে কেউ গাইছে। যাদের মেধা রয়েছে তারা কিন্তু ভালো করছে। মেধা না থাকলে টিকে থাকা যাবে না। অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এখন মেধাহীনদের ভিড়ে মেধাবীদের নিজেকে প্রকাশ করতে কষ্ট হচ্ছে। তাই মেধাবীদের বলব ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে।

Exit mobile version