আশঙ্কাজনক পরিমাণ কমে গেছে সরকারি গুদামে চালের মজুদ

299

সরকারি গুদামে চালের মজুদ আশঙ্কাজনক পরিমাণ কমে গেছে। ফলে আপদকালীন খাদ্য মজুদ ঠেকেছে প্রায় তলানিতে। গতবছর যেখানে এসময়ে সরকারি গুদামগুলোতে চাল-গমের মজুদ ছিল ১০ লাখ ২২ হাজার ৪০ টন, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তা নেমে এসেছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯০ টনে। অথচ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় কমপক্ষে ১০ লাখ টন খাদ্য মজুদ রাখা খুবই জরুরি বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। সেই মোতাবেক সরকারি গুদামগুলোতে বিগত বছরগুলোতে মজুদের পরিমাণ ছিল কম-বেশি ১০ লাখ টন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীতে বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে খাদ্য পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে। যদিও তা মানতে নারাজ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা। তাদের দাবি, কোনো সমস্যা হবে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আপদকালীন মজুদ থেকে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি কর্মসূচিতে সাড়ে ৭ লাখ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে। আর ওই কারণেই গুদামে মজুদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। অথচ ওই কর্মসূচি নেয়ার আগে তেমন কোনো প্রস্তুতি অথবা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। ফলে মজুদ কমার সাথে সাথে তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যাও খাদ্য মজুদ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। ইতিমধ্যে হাওর অঞ্চলে বিভিন্ন খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সাড়ে ১৮ হাজার টনের বেশি চাল আপদকালীন মজুদ থেকে বিতরণ করা হয়েছে। তবে খাদ্য মজুদ কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকা কেজি দরের চাল) আরো এক মাস চালু রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও তা বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জোড়াতালি দিয়ে চলছে ওএমএস, ভিজিএফ এবং জিআরের মাধ্যমে সরকারের খাদ্যসহায়তা কার্যক্রমও। সরকারি মজুদের দুর্বল পরিস্থিতি টের পেয়েই অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েই চলেছে। কারণ তারা জানেন দাম স্বাভাবিক রাখতে দেশব্যাপী ওএমএস কার্যক্রম চালানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও ইতিমধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদেশ থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানি করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদফতর। সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে সরকারি মজুদ ব্যবস্থা কখনোই এতো নাজুক হয়নি। বর্তমানে মজুদ কম থাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকা কেজি দরের চাল) মে মাস পর্যন্ত চালু রাখার কথা থাকলেও এপ্রিলেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বোরো সংগ্রহ টার্গেট অনুযায়ী না হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য টার্গেট সফল করতে চাল আমদানির শুল্ক তুলে দেয়া হচ্ছে। যাতে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ে এবং দাম কমে। মূলত পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই গতবছর ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কর্মসূচি চালু করায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সাড়ে ৪ লাখ টন চাল বিতরণ করে। ওই কর্মসূচিতে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে ৩ লাখ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আর ওই সাড়ে ৭ লাখ টন চাল আপদকালীন মজুদ থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাওর অঞ্চলে গত ৩০ এপ্রিল থেকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে এখন শুধুমাত্র ওএমএস, ভিজিএফ কর্মসূচি চালু রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওএমএসের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮৩টি ইউনিয়নে এক টন করে চাল বিতরণের কথা বলা হলেও বাস্তবে ২৭৯টি ইউনিয়নে ওই কর্মসূচি চলছে।  সূত্র আরো জানায়, বিপদের কথা চিন্তা করেই আপদকালীন মজুদ রাখা হয়। চালের সরকারি মজুদ ৩ লাখের নিচে নেমে আসা খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন যে কোনো মূল্যে চালের মজুদ ও বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ জরুরি। কারণ একদিকে সরকারি গুদামেও চাল নেই; অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছে তাদের কাছেও চাল নেই। মজুদ যতো কম হবে ততোই দাম বাড়বে। ব্যবসায়ীরা যখন জানতে পারেন সরকারি মজুদ কম, তখন তারা ইচ্ছামত দাম বাড়াবেই। আর আগাম বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকলে দাম ও মজুদ দুটোই বাড়াবে। কারণ সরকারি মজুদ পর্যাপ্ত না থাকায় ইচ্ছা করলেই সরকার ওএমএস বা অন্য কোনো কর্মসূচি চালু করতে পারবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্তহবে গরিব ও সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি সীমিত হারে শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে হবে। একেবারে তুলে দিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চালের মজুদ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে হাওর অঞ্চলসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় আরো বেশি খাদ্যসহায়তা দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হতো। এদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান জানান, হাওর এলাকায় অকাল বন্যায় ক্ষতি হলেও বোরো সংগ্রহের টার্গেট ব্যাহত হবে না। দেশে যে খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি চলছে তাতে প্রতি মাসে চাল-গম খরচ হচ্ছে মাত্র ২৫ হাজার টন। এখনও যে মজুদ রয়েছে তাতে আরও ৭-৮ মাস চলবে। বিভিন্ন দেশের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) থাকায় জিটুজি পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় চাল-গম আনা সম্ভব। ফলে বড় ধরনের দুর্যোগ হলেও তা মোকাবেলার সামর্থ্য সরকারের রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় সরকার। অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানান, সরকারি মজুদে কোনো ঘাটতি নেই। হাওর এলাকায় যথাযথ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ৫ লাখ টন খাবার মজুদ থাকলে ঘাটতি হয় কী করে? শিগগিরই আরো ১৬ লাখ টন ধান-চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে।