আমরা বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি : এনসিপি’র আহ্বাক নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র ‘বিচার, সংস্কার, ও দেশ পূনর্গটনের লক্ষ্যে জনতার দুয়ারে জুলাই’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৬ জুলাই) দুপুরে জেলা শহরে শান্তিমোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে জেলা শহর। পদযাত্রাটি বাতেন খাঁর মোড়-নিমতলা-বড়ইন্দারা মোড় ও গাবতলা হয়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে গিয়ে পথসভায় মিলিত হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে আমের রাজধানী উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন-এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা হওয়া সত্বেও এই জেলার আম শিল্পকে বিশ্বাজারে তুলে ধরতে অতীতে কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তা ছাড়া আমরা জানি এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেশমশিল্পের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু দিনে দিনে এই রেশম শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই জাতীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কোনো ধরনের উদ্যোগই নেয়া হয়নি। আমরা চাই বাংলাদেশের যেসব শিল্প রয়েছে সেগুলোগে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা জানি আপনারা দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য আন্দোলন করছেন। আমরা এই সমাবেশ থেকে আপনাদের এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই সরকার যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দাবি মেনে নেয়।
এনসিপি নেতা নাহিদ বলেন—চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমাদের সীমান্তের প্রতিরোধের প্রতীক। সীমান্ত মানে কাস্তে হাতে বসে থাকা সেই কৃষক। আমরা সেই কৃষকের সন্তান। বুক পেতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, বুলেট গুলি বুক পেতে নিয়েছি। এই মঞ্চে শহিদ তাকের হোসেনের পরিবার উপস্থিত রয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুইজন সন্তান শহিদ হয়েছেন। জুলাই গণঅথুত্থানে যারা জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সেদিন দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিল, আমরা যেন সেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চেয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার চেয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা গণহত্যাকারীদের বিচার চেয়েছি। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ চেয়েছি।’
নাহিদ বলেন, ‘আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের একটা বার্তা নিয়ে এসেছি, যে বার্তা একটা ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায়, যে বার্তা একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। আমরা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি।’
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এখানে গ্রেনেড মারে, বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। আমরা এইসব আগ্রাসন আর মেনে নিব না। সীমান্তে অনেক বাহাদুরি করেছে দাদারা। সীমান্তে আর যদি কোনো দাদাগির করতে দেয়া হবে না। সীমান্তে আর যদি আগ্রসন চালানো হয়, সীমান্তে আমার ভাইদের ওপর হত্যা চেষ্টা চালানো হয়, আমরা সীমান্তে লং মার্চ ঘোষণা করব। আমাদের সীমান্ত আমরাই রক্ষা করব।’ সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশকে নতুন কাঠামোতে, নতুন কায়দায় পরিচালনার জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশের মৌলিক সংস্কারকে কেউ যদি বাধাগ্রস্থ করে, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রকেকেউ যদি আটকে রাখতে চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এনসিপি’র প্রধান সমন্বয়কারী আলাউল হকের সভাপতিত্বে এবং এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য দেন, এনসিপি’র যুগ্ম আহবায়ক তাসনুভা জারিন, এনসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আসিফ মোস্তফা জামাল।
কর্মসূচিতে এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপি নেতৃবৃন্দ গণঅভ্যুত্থানে শহিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের তারেকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং এনসিপির জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন।