যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য সহায়তা হ্রাসে দুর্ভিক্ষের মুখে কোটি আফগান : জাতিসংঘ

আফগানিস্তানে মার্কিন খাদ্য সহায়তা হ্রাস ব্যাপক খাদ্যসংকটকে আরও ঘনীভূত করতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের সক্ষমতা মাত্র অর্ধেক প্রয়োজনীয় মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে, তাও অর্ধেক রেশন দিয়ে।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডব্লিউএফপির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মুটিনতা চিমুকা জানান, আফগানিস্তান বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মানবিক সংকটে রয়েছে। তিনি দাতাদের প্রতি সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
কাবুল থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘের হিসাবে, ৪ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ৩১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
চিমুকা বলেন, ‘আমাদের হাতে যে সামান্য সংস্থান রয়েছে, তাতে সারা বছরজুড়ে মাত্র ৮ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে। তাও যদি আমরা অন্যান্য উৎস থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা পুরোপুরি পাই।’
তিনি জানান, সংস্থাটি আগে থেকেই অর্ধেক রেশন বিতরণ করছে, যাতে স্বল্প সম্পদে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। ‘সাধারণত এই সময়ে ২০ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সহায়তা করা হয়। এটা বিশাল এক সংখ্যা, যা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’
এ বছর বৈশ্বিকভাবে ডব্লিউএফপির তহবিল ৪০ শতাংশ কমে গেছে। আফগানিস্তানের জন্য সহায়তাও বিগত বছরগুলোতে হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনিক ন্যূনতম ২,১০০ কিলোক্যালোরি পূরণের জন্য নির্ধারিত পূর্ণ রেশনও অর্ধেক করে দিতে বাধ্য হয়েছে সংস্থাটি।
‘এটা খুবই মৌলিক সহায়তা, কিন্তু জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক, ‘বলেন চিমুকা। বিশ্বসম্প্রদায়ের উচিত এমন একটি সহায়তা নিশ্চিত করা।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পরপরই তিন মাসের জন্য সব বিদেশি সহায়তা স্থগিত করে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। জরুরি খাদ্য সহায়তা এর আওতার বাইরে থাকার কথা থাকলেও সম্প্রতি ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ১৪টি দেশে এই সহায়তা কেটে দিচ্ছে, যার মধ্যে আফগানিস্তানও রয়েছে। এটি কার্যকর হলে তা ‘কোটিরও বেশি মানুষের জন্য মৃত্যুদণ্ড’ হবে বলে আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি দেশের জন্য সহায়তা পুনর্বহাল করলেও তালেবান-শাসিত আফগানিস্তান সে তালিকায় ছিল ন।
চিমুকা বলেন, ‘যদি বাড়তি তহবিল না আসে, তাহলে হয়তো আমাদের বলতে হবে—আমরা আপনাদের আর সহায়তা দিতে পারছি না। তখন তারা কীভাবে বাঁচবে?’
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব চরমে। পাকিস্তান থেকে বহু আফগান শরণার্থী ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, যাদের বাড়িঘর বা প্রয়োজনীয় সম্পদ কিছুই নেই।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘ সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক দাতাদের দেশটিকে সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ২ কোটি ২৯ লাখ মানুষ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তায় রয়েছে।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়ক ইন্দ্রিকা রত্নায়েক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যদি আমরা আফগান জনগণকে দারিদ্র্য ও দুর্ভোগের চক্র থেকে বের করে আনতে চাই, তবে তাৎক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতার ভিত্তি তৈরির কাজও চালিয়ে যেতে হবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে গেলে আঞ্চলিক অভিবাসন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
উল্লেখ্য, জার্মানি ও ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশও তাদের বৈদেশিক সহায়তা বাজেট কাটছাঁট করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাটছাঁট সবচেয়ে বেশি। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে ২৮ কোটি ডলার দিয়েছে, যা সবচেয়ে বড় অনুদান ছিল।
ডব্লিউএফপি ছাড়াও আফগানিস্তানে কাজ করা অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোও অর্থ সংকটে পড়েছে, কেউ কেউ এমনকি, কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এছাড়া, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সঙ্গে আফগানিস্তানে পরিচালিত দুটি কর্মসূচিও বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সংস্থা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার প্রসারে কাজ করত।
কৃষিভিত্তিক জীবনধারার ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণের প্রায় ৮০ শতাংশই এই সংকটে আক্রান্ত হচ্ছে, বিশেষ করে অপুষ্টি প্রতিরোধ ও কৃষিভিত্তিক সহায়তামূলক প্রকল্পগুলোতে।