আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয় আইটেমে ভরপুর ‘ইত্যাদি’

466

এত লম্বা সময় নান্দনিকতাকে সঙ্গে নিয়ে পথাচলা অত্যন্ত কঠিন। অথচ সেই কঠিন কাজটি ২৮ বছর ধরে নিয়মিত করে যাচ্ছেন নন্দিত নির্মাতা হানিফ সংকেত। তিন মাস অন্তর একটি করে চমৎকার ‘ইত্যাদি’ উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যা টেলিভিশন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এবারও ঘটেনি তার ব্যত্যয়। গেল শুক্রবার প্রচার হওয়া ‘ইত্যাদি’ ছিল বরাবরের মতোই আকষর্ণীয় ও শিক্ষণীয় নানা আইটেমে ভরপুর। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, পর্যটন ও দর্শণীয় স্থানগুলোতে গিয়ে ‘ইত্যাদি’ ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছিল পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর পাকশীস্থ শতাব্দী পেরিয়ে আসা একমাত্র ইস্পাত নির্মিত সর্ববৃহৎ রেল সেতু ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে। যা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। শেকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচারবিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তাদের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরা হয়। যাতে তাদের কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এবারের অনুষ্ঠানে তেমনই একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন ছিল পাবনার বেড়া উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের নিবেদিতপ্রাণ
কৃষিকর্মী বাদশা মোল্লার উপর। প্রচারসর্বস্বতার এই যুগেও প্রচারবিমুখ কৃষি অন্ত্যপ্রাণ বাদশা তার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বিনামূল্যে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে নিজ হাতে বিতরণ করছেন বীজ আর সহায়তা করছেন বপনে। তার সেই বীজ থেকে বিভিন্ন শাক-সবজিতে ভরে উঠছে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা। শিক্ষণীয় এ প্রতিবেদনটি বেশ ভালো লেগেছে। বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ওপর তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদনটি ছিল মনকাড়া। সুচিত্রা সেনের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবকিছুই এই পাবনাতেই। এসব তথ্য বইপুস্তকে পাওয়া গেলেও এবারের ইত্যাদিতে আরও বিস্তারিত জানা গেল পাবনায় বসবাসকারী সুচিত্রা সেনের এক বাল্যবান্ধবীর কাছ থেকে। এবারের অনুষ্ঠানে প্রচারিত ঐতিহ্যবাহী ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’-এর ওপর করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিও ছিল বেশ তথ্যবহুল এবং সময়োপযোগী। ইত্যাদির নিয়মিত আইটেম হিসেবে বরাবরই পরিবেশিত হয় গান। এবারের অনুষ্ঠানে মূল গান ছিল দু’টি। যেগুলোর একটি ছিল পাবনারই কৃতী সন্তান বাপ্পা মজুমদার ও তার দলছুট ব্যান্ডের পরিবেশনায়। ‘বাঁশপাতা আর কলমিলতা’ শিরোনামের এ গানটি ভালো লেগেছে। পাবনারই আরেক কৃতী শিল্পী স্বনামধন্য অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী মা, বোন, বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষদের আবেগময় সম্পর্কের অনুভূতি নিয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি গানের সমন্বয়ে একটি গান গেয়েছেন। গানটিতে তার সঙ্গে পারফর্ম করেছেন অনুষ্ঠান ধারণে উপস্থিত কয়েকজন দর্শক। গানশেষে চঞ্চল চৌধুরীসহ তাদের মঞ্চে আহ্বান জানানো হয়। সেখানে গিয়ে তারা গানে পারফর্ম করা চরিত্রগুলোর সম্পর্কের ব্যাপারে মন্তব্য করেন। যা ছিল বেশ শিক্ষণীয়। এ ছাড়া সদ্যপ্রয়াত বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক এবং বরেণ্য সংগীতশিল্পী আবদুল জব্বারকে নিয়ে স্মৃতিচারণ পর্বটি ভালো লেগেছে। এ সবের পাশাপাশি বরাবরের মতো ‘ইত্যাদি’র এবারের অন্য আইটেমগুলোও দর্শক হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে দারুণভাবে। সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় একটি ‘ইত্যাদি’ উপহার দেয়ায় এর নির্মাতা হানিফ সংকেতের জন্য রইলো অভিনন্দন। আর দীর্ঘদিন ধরে অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করে যাওয়ায় কেয়া কসমেটিকস্ লিমিটেডকেও সাধুবাদ।