আইসিসির বিচারকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানাল ইইউ

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চার বিচারকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছে ইইউ।  খবর আল জাজিরার। শুক্রবার (৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, “ আইসিসির বিচারকদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চার বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ ও ভিত্তিহীন পদক্ষেপ’ নেওয়ার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞাটি জারি করা হয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার (৬ জুন) ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, “হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রতি ইইউর ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে।” ‘এক্স’ পোস্টে তিনি আরো বলেন, “আইসিসি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের অপরাধীদের জবাবদিহি করে এবং ভুক্তভোগীদের কথা বলার সুযোগ দেয়। বিচারকদের চাপ ছাড়াই কাজ করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।” জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক জানান, তিনি মার্কিন সিদ্ধান্তে ‘খুবই বিরক্ত।’  টার্ক বলেন, “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচারকদের বিচারিক কার্য সম্পাদনের জন্য তাদের উপর আক্রমণ- আইনের শাসন ও আইনের সমান সুরক্ষার প্রতি শ্রদ্ধার সরাসরি পরিপন্থি- যে মূল্যবোধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের আক্রমণ সুশাসন ও ন্যায়বিচারের যথাযথ প্রশাসনের জন্য গভীরভাবে ক্ষতিকর।”  জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান আইসিসির বিচারকদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। ২৭টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তাও আইসিসিকে ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিপ্রস্তর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইসিসিরি স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।” মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, আইসিসি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা আইসিসির চার বিচারকের সবাই নারী। তারা হলেন- উগান্ডার সোলোমি বালুঙ্গি বোসা, পেরুর লুজ ডেল কারমেন ইবানেজ কারানজা, বেনিনের রেইন অ্যাডিলেড সোফি আলাপিনি গানসো এবং স্লোভেনিয়ার বেটি হোলার। ইইউ সদস্য স্লোভেনিয়া বলেছে, তারা ‘বিচারিক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ প্রত্যাখ্যান করে’ এবং ইইউকে তার ব্লকিং আইন ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে।

স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, “নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকের অন্তর্ভুক্তির কারণে, স্লোভেনিয়া ব্লকিং আইনটি অবিলম্বে সক্রিয় করার প্রস্তাব করবে।”

ব্লকিং আইনটি ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অ্যানেক্সে তালিকাভুক্ত আইনগুলোর সঙ্গে ‘প্রত্যক্ষ’ বা ‘পরোক্ষ’ (সাবসিডিয়ারি বা মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে) সম্মতি থেকে নিষিদ্ধ করে। কিউবা এবং ইরানের সঙ্গে ইউরোপীয় বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা থেকে ওয়াশিংটনকে বিরত রাখতে অতীতে এই আইন ব্যবহার করা হয়েছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মানে হলো, বিচারকদের বিশেষভাবে মনোনীত অনুমোদিত ব্যক্তিদের তালিকায় যুক্ত করা হবে। তাদের যে কোনো মার্কিন সম্পদ জব্দ করা হবে এবং সেগুলো কেবল মার্কিন ব্যাংকগুলোই নয় বরং বিশ্বব্যাপী অনেক ব্যাংক দ্বারা ব্যবহৃত একটি স্বয়ংক্রিয় নজরদারি প্রক্রিয়ায় রাখা হবে, যার ফলে অনুমোদিত ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা বা খোলা বা অর্থ স্থানান্তর করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে এটিই প্রথমবার নয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকটি পরেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে আইসিসি তদন্তে অংশগ্রহণকারী যে কাউকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন। সেসময় সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছিলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ন্যায়বিচারের পথকে বিকৃত করতে পারে, উদাহরণস্বরূপ, সাক্ষীদের প্রমাণ নিয়ে এগিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করবে।

কিন্তু ট্রাম্প যুক্তি দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সাবেক ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের আইসিসিরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন ছিল।

তিনি আরো দাবি করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল ‘যুদ্ধের আইন কঠোরভাবে মেনে চলা গণতন্ত্রের বিকাশ’ করছে এবং আইসিসির তদন্ত সামরিক সদস্যদের ‘হয়রানি, নির্যাতন ও সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের’ হুমকি দিচ্ছে।