আইরিশদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে তৃতীয় দিনে অসহায় বাংলাদেশ

89

বাংলাদেশের তৃতীয় দিন শুরু হয়েছিল ইনিংস ব্যবধানে বড় জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দিলেন টকার-টেক্টর-ম্যাকব্রিনরা। ৪ উইকেটে ২৭ রানে দিন শুরু করে মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা আইরিশরা ৮ উইকেটে ২৮৬ রানে দিন শেষ করে।  দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে উলটো লিড দিয়ে দিন শেষ করেছে তারা। বাংলাদেশের ১৫৫ রান টপকে তৃতীয় দিন শেষে আইরিশদের লিড ১৩১। ম্যাকব্রিন ৭১ ও হুম ৯ রানে অপরাজিত আছেন। সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেন টকার। ৫৬ রান করেন টেক্টর। প্রথম দুই সেশনে বাংলাদেশ ২ উইকেট নেয়। আর দ্বিতীয় সেশনে নেয় ২ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন তাইজুল। ২ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। আইরিশদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে এক প্রকার অসহায় ছিলেন সাকিবরা।

অফে পিচ করা বল হালকা টার্ন করেছিল। অ্যাডেয়ার খোঁচা দিয়ে বসেন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন লিটন দাস। ৪৯ বলে অ্যাডেয়ার ১৩ রান করেন। তার আউটে ভাঙে ৮৪ বলে ৩৮ রানের জুটি। অন্য প্রান্তে অবিচল ফিফটি করা ম্যাকব্রিন। তার সঙ্গী হুম। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুলের এটি চতুর্থ উইকেট।

সাকিবের হাই ফুল টসে ফাইন লেগে চার মেরে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পান ম্যাকব্রিন। সাকিবের বলটি নো হয়। ৯৩ বলে ফিফটির দেখা পান তিনি। টকার সাজঘরে ফেরার পর অ্যাডেয়ারকে সঙ্গী করে এগোচ্ছেন ম্যাকব্রিন। দুজনের ২৪ রানের জুটিতে লিড দাঁড়িয়েছে শতরানে।

সেঞ্চুরিয়ান টকারকে ফিরিয়ে স্বস্তি বাংলাদেশ শিবিরে। এবাদতের বলে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টকার। ক্যাচ ধরেই শরিফুল মেতে ওঠেন উল্লাসে। ১৬২ বলে ১০৮ রানে থামেন টকার। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৪টি চার ও ১টি ছয়ে। তার আউটে ভাঙে ১১১ রানের জুটি। এই জুটিতে ভর করেই বাংলাদেশের লিড টপকে পালটা লিড দেয় আয়ারল্যান্ড। ক্রিজে ম্যাকব্রিনের সঙ্গী মার্ক অ্যাডেয়ার।

সেঞ্চুরির পর ৮১তম ওভারের শেষ বলে আবার চার হাঁকান টকার। আর এতে ম্যাকব্রিনের সঙ্গে জুটিরও সেঞ্চুরি হয়। সপ্তম উইকেটে তারা ১৪৯ বলে ১০০ রান যোগ করেন।

 তাইজুলকে মিড অফে চার মেরে অভিষেক টেস্টে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন লরকান টকার। ১৪৯ বলে তিনি সেঞ্চুরির দেখা পান। টকার এর আগে ফিফটি করেছেন ৯৪ বলে। পরের ফিফটি হতে লাগে মাত্র ৫৫ বল। তার সেঞ্চুরির ইনিংস সাজানো ছিল ১৩টি চার ও ১টি ছয়ে।  ৭ নাম্বারে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম আইরিশ ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেন টকার। এর আগে ৯ জন ক্রিকেটারের এই কীর্তি রয়েছে। সাতে নেমে সর্বোচ্চ ১৩২ রান করেন রমশ শান্থা। টকার দ্বিতীয় আইরিশ হিসেবে অভিষেকে শতরান করেন। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন কেভিন ও ব্রায়ান।

দুইশ থেকে ১ রান দূরে থেকে চা বিরতিতে গিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। বিরতির পর তাইজুলকে প্রথম ওভারে মেডেন দেন ম্যাকব্রিন। দ্বিতীয় ওভারে মিরাজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দুইশ পূর্ণ করেন টকার। ৭৫.২ ওভারে ৬ উইকেটে দুইশ করে আইরিশরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লিড দাঁড়িয়েছে ৫১। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির পথে টকার (৯০)। সঙ্গী ম্যাকব্রিন (২৭) দিচ্ছেন দারুণ সঙ্গ।

প্রথম সেশনে ওভারপ্রতি ২.২০ রান করেছিল আয়ারল্যান্ড। সময় বাড়ার সঙ্গে বাড়ে রানের গতিও। দিনের দ্বিতীয় সেশনে ২৭ অভারে ১০৬ রান যোগ করে আইরিশরা। ওভার ৩.৯৩ রান তুলতে গিয়ে হারিয়েছে ১ উইকেট। টকার ৮৯ ও ম্যাকব্রিন ২৭ রানে অপরাজিত আছেন। দুজনের জুটি থেকে এখন পর্যন্ত আসে ৭৬ রান। ইনিংস হারের শংকা কাটিয়ে সফরকারীরা পালটা প্রতিরোধ গড়ে খেলছে দারুণ। আইরিশদের লিড ৪৪ রান।

বাংলাদেশের রান টপকে আইরিশদের লিড। এগিয়ে এসে তাইজুলকে মিড অনে দারুণ চার মেরে টকার লিড এনে দেন আইরিশদের। বাংলাদেশ ১৫৫ রানের লিড দিয়েছিল। ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও দারুণ দৃড়তায় আইরিশরা পালটা লিড দেন। টকার-ম্যাকব্রিন জুটি ইতিমধ্যে ফিফটি পেরিয়ে যায়। দুজনে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করছেন। ৭৩ বলে ফিফটির জুটি পূর্ণ করেন। লিড পাওয়ার পর থেকে প্রতি ওভারে হাঁকাচ্ছেন বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি।

স্কয়ারলেগে তাইজুলকে ঠেলে দিয়ে ফিফটির দেখা পান লরকান টকার। অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় আইরিশ হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি করেন টকার। এর আগে টেক্টর এই কীর্তি গড়েন। ৯৪ বলে ৬টি চারের মারে ফিফটি করেন টকার। প্রথম সেশনের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি ব্যাটিং করছেন। টেক্টরের সঙ্গে ৭২ রানের জুটির পর এখন জুটি গড়েছেন ম্যাকব্রিনের সঙ্গে।

তাইজুলের শিকার হয়ে সাজঘরে টেক্টর। তাইজুলের ফুল বলে প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন টেক্টর। বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার আলিম দার। রিভিউ নেন টেক্টর, তবে লাভ হয়নি। ১৫৯ বলে ৫৬ রান করেন তিনি। শুরুতে ব্যাটিং ধসের পর মুরকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন। মুর প্রথম সেশনের মাঝামাঝি সময়ে ফিরলে টকারকে সঙ্গী করে ফিফটি তুলে নেন। তিনি ক্রিজে ছিলেন ২০৯ মিনিট। তার ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশের লিড টপকানোর ভিত পায় আইরিশরা। ক্রিজে টকারের সঙ্গী ম্যাকব্রিন।

চার মেরে ১৪৫ বলে ফিফটির দেখা পেলেন হ্যারি টেক্টর। ১৮৬ মিনিট ধরে ব্যাটিং করছেন টেক্টর। গতকাল থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে এই ব্যাটসম্যান দিচ্ছেন ধর্য্যের পরীক্ষা। ৬টি চার ও ১টি ছয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করে টেক্টর। ফিফটির পাশাপাশি টকারের সঙ্গে জুটিরও ফিফটি হয়। দুজনে ১১৩ বলে এই ফিফটির জুটি গড়েন। দলীয় ১০০ হয় ৫১ ওভারে। রানরেট ওভার প্রতি দুইয়ের নিচে।

প্রথম ঘন্টার শেষে শরিফুল ফেরান আগের দিনের অপরাজিত মুরকে। এরপর প্রতিরোধ গড়েন টেক্টর-টকার। দুজনে কাটিয়ে দেন প্রথম সেশন। কোনো বিপদ ছাড়াই মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় তারা। এই সেশনে ৩০ ওভারে মাত্র ৬৬ রান নেয় আইরিশরা, হারায় ১ উইকেট। টেক্টর-টকারের জুটি থেকে ৮৯ বলে ৪২ রান আসে। টেক্টর ১৩২ বলে ৪৩ ও টকার ৪৩ বলে ২৪ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম সেশনে সফল বোলার শরিফুল। সাকিব-তাইজুলরা হাত ঘোরালেও উইকেটের দেখা পাননি।

৬.৩ ওভারে ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর মুর-টেক্টর জুটির শুরু। গতকাল ১০ ওভার খেলে দিন শেষ করেন বিপদ ছাড়াই। আজ দিনের শুরু থেকেই সাবলীল খেলছেন দুজনে। উইকেট কামড়ে ধরে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন দুজন। কাটিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম ঘণ্টা। বিপত্তি বাধে আজ দিনে শরিফুলের দ্বিতীয় ওভারে। ব্যাক অব লেন্থের বল বেরিয়ে যাচ্ছিলো আউট সাইড অফ দিয়ে, অহেতুক ব্যাট চালিয়ে খেসারত দিলেন মুর। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় উইকেটরক্ষক লিটনের হাতে। ৭৮ বলে ১৬ রান করেন মুর। তার আউটে ভাঙ্গে ১৫৪ বলে ৩৮ রানের জুটি। ক্রিজে টেক্টরের সঙ্গী টকার।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। ১২৮ রানে পিছিয়ে থেকে দিন শুরু করে স্বাগতিক শিবির। হাতে আছে ৬ উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে বোলিং শুরু করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দিনের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন তাইজুল ইসলাম। তার পঞ্চম বলে সুযোগ হাতছাড়া করেন লিটন দাস। খোঁচা লেগে উইকেটের পেছনে গেলেও লিটন তালুবন্দি করতে পারেননি। ৫২ বলে ৯ রান করে টেক্টর বেঁচে যান।

দ্বিতীয় দিন শেষে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ২৭ রান। হারিয়েছে ৪ উইকেট। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে হলে করতে হবে ১২৮ রান। বাংলাদেশের প্রয়োজন ৬ উইকেট। ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর টেক্টর-মুর দিন পার করে দেন। টেক্টর ৮ ও মুর ১০ রানে অপরাজিত আছেন। সাকিব-তাইজুল নেন ২টি করে উইকেট। 

মিরাজের ঘুর্ণিতে গ্রাহাম হুম বোল্ড হলে আয়ারল্যান্ড ২১৪ রানে অলআউট হয়। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৭৭.২ ওভারে অলআউট হয় তারা। তাইজুল ইসলাম নেন ৫ উইকেট। ২৮ ওভার বোলিং করে ৫৮ রান দিয়ে এই উইকেটগুলো নেন তাইজুল। মেডেন দেন ১০টি। এটি তার ক্যারিয়ারের ১১তম ফাইফার। এ ছাড়া ২টি করে উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও এবাদত হোসেন। সাকিব আল হাসান বোলিংয়ে আসেন ৬৬তম ওভারে। ৩ ওভার বোলিং করে তিনি ৮ রান দেন। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন টেক্টর। এ ছাড়া টকার ৩৭, ক্যাম্পার ৩৪ ও অ্যাডেয়ার ৩২ রান করেন।

প্রথম দুই সেশনে দাপট দেখালেও তৃতীয় সেশনটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের। মাত্র ১৬.৩ ওভারে ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিক শিবির। মিরাজের ফিফটিতে (৫৫) লিড পার হয় দেড়শ। সর্বোচ্চ ১২৬ রান করেন মুশফিক। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৮৭ রান। মাঝে লিটন খেলেন ৪১ রানের ইনিংস। আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২১৪ রান করে। বাংলাদেশ করে ৩৬৯ রান। লিড ১৫৫। ম্যাকব্রিন ২৮ ওভারে ১১৮ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। এ ছাড়া ২টি করে উইকেট নেন অ্যাডেয়ার ও হোয়াইট।