অস্ত্র চোরাচালান ঠেকাতে সীমান্তে বাড়তি নজরদারি

511

বাংলাদেশের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করে বলে অভিযোগ আছে। এরপর এগুলো হাতবদল হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। কথিত আছে যে, অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় এই অস্ত্র এবং নির্বাচনের সময় এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)সবসময়ই সক্রিয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে যাচ্ছে। বিজিবি মনে করছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করতে পারে। আর সেটি আসতে পারে উত্তরাঞ্চলের তিন সীমান্ত এলাকা রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ হয়ে। তাই এই তিন এলাকাকে একটু বেশি স্পর্শকাতর হিসেবে গণ্য করছে। এ জন্য ওই সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের চিন্তা করছে বিজিবি। ভৌগলিক দিক বিবেচনায় এই তিন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যাতায়াত করা সহজ। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র কারখানা পাওয়া গেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া কুচবিহার রাজ্যেও অবৈধ অস্ত্র কারখানার সন্ধান মিলেছে বলে সে দেশের গণমাধ্যম জানিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও দাবি করেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অভিজাত এলাকা গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় জঙ্গি হামলায় যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় তৈরি। এছাড়া গুলশান হামলার আগে নব্য জেএমবির নেতা ছোট মিজান ও আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় অস্ত্র নিয়ে আসেন বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ এলাকা একটু সেনসিটিভ। কিছু কিছু মৌসুম আছে যখন অবৈধ অস্ত্র আসার সুযোগ থাকে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়। এই মৌসুমে অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা হয়। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনও তাদের তৎপরতা ‍বৃদ্ধি করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে যাতে অস্ত্র না আসতে পারে সে জন্য আমরা কাজ করব। আমি নিজেও সেখানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি। ভবিষ্যতেও যাব। অস্ত্রের প্রবেশ ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি জনসাধারণকেও আমরা সম্পৃক্ত করব। তাছাড়া ওই রিজিওনকে নজরদারী বাড়াতে বলা হয়েছে।’আবুল হোসেন বলেন, ‘শুধু আমাদের গোয়েন্দা তথ্য নয়, সমপক্ষের গোয়েন্দা তথ্য নিয়েও বিজিবি কাজ করবে। আমাদের সমপক্ষ যারা আছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করব। এছাড়া কোন সন্ত্রাসী যাতে স্থলবন্দর ব্যবহার করে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। কারণ, সন্ত্রাসীরা ফাঁক ফোঁকড় পেলেই সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে প্রবেশ করে। সেখানে আমাদের সম্মিলিভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে সেখানে কুইকলি অ্যাকশন ফোর্সের মাধ্যমে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানান আবুল হোসেন। ভবিষ্যতে গোটা সীমান্তে এ ফোর্স দিয়ে কাজ করানোর ইচ্ছে আছে তার।
তিনি বলেন, ‘বর্ডার সুরক্ষার জন্য আমরা স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট করার চেষ্টা করছি। এখন ব্যাটালিয়নের কোন সদস্য কোথায় আছে তা প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তবে আমাদের সীমান্তে সড়ক ব্যবস্থা খুব দুর্বল। এগুলোকে উন্নত করার চেষ্টা চলছে। সেখানে আমাদের কুইকলি অ্যাকশন ফোর্স কাজ করবে। যেখানে কোন সমস্যা হবে আমাদের ফোর্স তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পৌঁছাতে পারবে।