দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা নির্বিঘ্নে চালিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৪২৪ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউণ্ডেশন পিকেএসএফ। আজ ঢাকার আগারগাঁওস্থ পিকেএসএফ ভবনে সংস্থার কর্মসূচি সহায়ক তহবিল থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১২ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। পিকেএসএফ-এর সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ-এর সভাপতিত্বে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, এমপি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য শিক্ষার আলো পৌঁছিয়ে দেয়ার যে সকল উদ্যোগ পিকেএসএফ নিয়েছে, তার প্রশাংশা করেন, মোস্তাফিজুর রহমান।
তাঁর বক্তব্যে তিনি সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম ও উদ্যোগের কথা বলেন এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তনের প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন সীমিত সম্পদ নিয়েই শিক্ষার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং সে জন্য সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকলের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ জরুরী বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।এর আগে মন্ত্রী শিক্ষা বৃত্তি পাওয়া ৩,৪২৪ জনের মধ্য থেকে ১০০জনের হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন।
পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পিকেএসএফ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ফাউণ্ডেশন এবং এটি সরকারের নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর কার্যক্রমকে বিন্যাস করে থাকে উল্লেখ করে ড. খলীকুজ্জমান আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিকেএসএফ আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল করিম প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সরকার গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। অর্থের অভাবে কেউ যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই জন্য পিকেএসএফ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ-এর উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ জসীম উদ্দিন “শিক্ষায় পিকেএসএফ” শীর্ষক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন। পিকেএসএফ-এর দারিদ্র্য বিমোচনের বিভিন্ন কার্যক্রমসহ বিশেষ তহবিল, সমৃদ্ধি কর্মসূচি (একটি মানব কেন্দ্রিক সমন্বিত উন্নয়ন মডেল) ও কর্মসূচি সহায়ক তহবিলের আওতায় শিক্ষা সম্পর্কিত সকল কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
পিকেএসএফ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘কর্মসূচি-সহায়ক তহবিল’ গঠন করে, যার আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া ও প্রতিকূল পরিবেশে জয়ী দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা তথা দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলে দরিদ্র পরিবারসমূহ দ্রুততম সময়ে দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবে সেই লক্ষ্যে ‘কর্মসূচি-সহায়ক তহবিল’ হতে ২০১২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাবৃত্তি বা আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে বিধায় জিপিএ-৪.০০ থেকে জিপিএ-৪.৯৯ প্রাপ্ত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পিকেএসএফ এই শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হয়।
এতিম, মহিলা প্রধান পরিবার, প্রতিবন্ধী সদস্য রয়েছে এরূপ পরিবার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী এবং যে সকল ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারে উপার্জনে সহায়তা করে থাকে সে সকল শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষাবৃত্তির জন্যে নির্বাচন করা হয়। পিকেএসএফ-এর “কর্মসূচি-সহায়ক তহবিল” হতে এ যাবৎ সর্বমোট ৮৬৭১ জন শিক্ষাথীকে সর্বমোট ৮.৫৭ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।