চাঁপাইনবাবগঞ্জে নবনির্মিত ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ সকালে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ভবনটি উদ্বোধন করেন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সদর আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ। এসময় তিনি বলেন হাসপাতাল চত্বরে সিভিল সার্জন ডা. এসএফএম খায়রুল আতাতুর্কের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক ও পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম। বক্তব্যে তারা বলেন এই যে এতো বড় ভবন আপনাদের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, এরপরও আপনারা যে দাবি করেছেন, আমি জেলাপ্রশাসককে জিজ্ঞেস করছিলাম, এতোগুলো নার্সিং লোক থাকতে, এরা যদি আমাদের সদর হাসপাতালে থাকে তাহলে চেহারাটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। তো তিনি বললেন তারা কাজ করার পর অন্য কোথাও চলে যান। আমি সিভিল সার্জনকে অনুরোধ করব, আপনারা কাছে থাকবেন। যাদের প্রশিক্ষিত করছেন তাদের কাছে রাখার চেষ্টা করবেন। আমি রক্ত নেয়ার সময় যে সুচ ফুটায় তাতে আমি ভয় পায়। আমাদের আগের জেলাপ্রশাসক একদিন আমার কাছে এসে বলছেন, আমার অজ্ঞান হবার অবস্থা। বললাম কেন? তিনি বললেন, রক্ত নিতে তিনবার ফুটো করছেন। আমি বলব, তিনবার নয় একবার ফুটো করনে, একবার যথেষ্ট। আমরা রক্ত দিতে রাজি আছি। তবে এভাবে নয়। অনুরোধ থাকবে আপনারা ভাল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন, দেশের জন্য। এইযে শিক্ষা নিচ্ছেন সরকার আপনাদের সহায়তা করছে প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আমরা কৃতজ্ঞ থাকি না। নতুন এই ভবনটিকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদের। আমার কিছু প্রস্তাবনা আছে। আমি সিভিল সার্জনকে জানাব। যেমন-প্রথমত এটিকে দালালমুক্ত করা, আপনি এটাকে দালালমুক্ত করবেন, আর যারা থাকবে ধরে আমাকে দিবেন। চারপাশে ক্লিনিক বন্ধ করতে হবে এবং এখানে সেবার মান বাড়াতে হবে। এখানে আসার পর আমরা শুনি যে, এটা নাই ওটা নাই তাহলে কিন্তু আমরা বাইরে যায়। আমাদের হয়তো অনেক জনবল নাই, অসুবিধা আছে, আমরা সেই ডাক্তারের কাছে যেতে চাই যে রুক্ষ কথা বলে না। আগে ডাক্তারের ব্যবহার দেখি। যেমন দারোগা বা ওসি যদি খাইষ্ট্যা মার্কা হয় তাহলে কি আপনারা থানায় যাবেন? না। ডাক্তার আর পুলিশের উপর মানুষের দাবি বেশি কারণ বিপদে পড়লেই প্রয়োজন। আমি জানি সিভিল সার্জনের ওভার ডিউটি হয়ে যায়, ধৈর্য্য রাখা যায়না। তারপরও বলব, আমাদের রোগীদের সাথে ভাল ব্যবহার করব। আমি আমার পুলিশ বাহিনীকেও বলি। অতএব আমরা এটি করতে চাই। আমরা অনুরোধ করব, অ্যাম্বুলেন্স রাখার জায়গায় গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। যেকোনো সহযোগিতা প্রয়োজন দেব। মেয়র সাহেবকে বলব, এই রাস্তায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দিয়েছিলাম। নিজে এসে। এই কাজটি আমার নয়। একাজ মেয়রের। রাস্তা পরিস্কার, পানির ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সবই থাকবে। বিনিময়ে আমরা দেব ট্যাক্স। রাস্তায় যানজট বা অবৈধ স্থাপনা থাকলে এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারবে না। সমস্যা হলে পুলিশের গাড়িও আসবে না। যারা রাষ্ট্রের শত্রু তারা আমারও শত্রু।)
জেলা প্রশাসক বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে উন্নয়নের আজকে একটি স্মরনীয় দিন। এই ১৪ লক্ষ মানুষের বি ক্যাটাগরি জেলাতে ৮ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ২৫০ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন করা হলো এটা চাট্টি খানি কথা না। এটা বড় বিষয়, আমরা জেলাবাসী, জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি হাসপাতাল দিয়েছেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়েছেন, হার্ডওয়্যার দিয়েছেন এখন সফঠওয়্যারের কি হবে। যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত আছি তারা না দিই তাহলে বৃথা যাবে। তাই আমরা যারা কাজ করছি তারা কমিটমেন্ট দিব, সফটওয়্যার দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে হার্ডওয়ার নিশ্চিত করি। আমি আশাবাদী। আমার এলাকা থেকে ঢাকা দুরে হওয়ায় তারা পাসপোর্ট নিয়ে আগরতলা হাসপাতালে যায়। দিনে দিনে ঘুরে আসে। কমমূল্যে চিকিৎসা পায়। তো আমরা যদি চিকিৎসা সেবাটা নিয়ে সেভাবে কাজ করি তাহলে মালদা বা মূর্শিদাবাদ থেকে লোকজন আসবে চিকিৎসা নিতে। আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে সম্ভব। সরকারি কলেজে বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দৌড়ায় কিন্তু সরকারি হাসপাতালে যায় না কেন? আমরা চেষ্টা করি। পারব তো। ডিসির কাছে ভর্তিজন্য তদবির যায়, সিভিল সার্জনের কাছে যায়না কেন?
স্বাস্থ্য বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন আমি রাজশাহী বিভাগে স্বাস্থ্য পরিচালক পদে আছি। আমি এখানে এসেছি দুটো কারণে। আনন্দের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে আর হাসপাতাল থেকে ২ মিনিট পায়ে হেটে আমার বাসা। ৬-৭ মাস হলো জয়েন করা। তো আমি, সবসময় চেষ্টা কোনধরেনের সেবা দেয়া যায়, মন্ত্রনালয় বা প্রশাসনিক আমি চেষ্টা করেছি এবং করছি। এই জায়গার ভাল হলে আমার এলাকার লোক, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশি সবাই ভাল থাকবে। আমি দাবিদাওয়া বেশি করতে চাই না। আমাদের এখানে কার কিকি দরকার সবাই বলেছেন, অনেক কিছু পেয়েছি। এসপির সাহেবের সাথে একমত ঘোষণা করছি। আমাদের সময় এসেছে দেশকে কিছু দেয়ার। আমরা কি পেয়েছি? আমরা যে দায়িত্বে আমরা জনগণের সেবক। প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখতে গিয়ে আমরা প্রশাসনিক সব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। আমি অনেক জায়গা পরিদর্শণ করলাম, ৭০০ উপজেলা গেলাম, এত ভাল সেবার মান। চিকিৎসক স্বল্পতা অন্যান্য সমস্যা আছে। তারপরও ভাল সেবা দিচ্ছে। একটা বিলি।ডংএর সফটয়োর বা চালিকা শক্তি আপনারা। আমার দায়বদদ্ধতা আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা ঠিকমত কাজ করি। আমাদের সংকটকে নিজস্ব সংকট ভাবতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, দালালমুক্ত করা, ডিউটি করা আমাদেরই কাজ। আমাদেরই কাজ। প্রধানমন্ত্রী এসডিজি পূরণে স্বাস্থ্যখাতে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখব। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেশুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রুহুল আমিন, জেলা বিএম এর সভাপতি ডা. দুরুল হোদা। সভাপতির বক্তব্যে সিভিল সার্জন জানান, আগামী জানুয়ারি মাস থেকে নতুন ভবনে সেবা কার্যক্রম চালু করা যাবে। জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। প্রসঙ্গত, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালকে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়ানো হয় নি। বর্তমানেও ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে কার্যত্রম। জেলাবাসী দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে নতুন ভবন নির্মানের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন হেল্থ পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে ১০ তলা ভিতের উপর ৮ তলা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
Home চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন, জানুয়ারি থেকে সেবা পাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের...