পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ত্রাণ কার্যক্রমে কোনো গতি তো নেই-ই, বরং প্রশাসনের একধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। তার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেছে ত্রাণমন্ত্রীর নেত্রকোনা সফরের সময়। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী জানতে চান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় সরকারের পক্ষ থেকে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑএমন অনেক কিছু। প্রায় কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর পাননি তিনি। মৎস্য কর্মকর্তার কাছে মন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, মাছের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে? উত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানতে চান, ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কী পরিমাণ মাছের পোনা ছাড়তে হবে? কিছু না ভেবেই কর্মকর্তা বললেন, ৩০ হাজার। তারপর মন্ত্রণালয়ের সচিব জানতে চান, এত কম পোনায় হবে? কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক জবাব দিলেন, তাহলে ৬০ হাজার পোনা ছাড়া যায়। এমন চিত্র হাওর-অধ্যুষিত সাতটি জেলায়ই কমবেশি দেখা যাবে। হাওরের লাখ লাখ মানুষের জীবন যখন চরম সংকটে, হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল বানের জলে ভেসে গেছেÑতাঁরা দিব্যি দিবানিদ্রায় দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। মাঠে যাওয়া নেই, দুর্গতদের রক্ষার বিষয়ে চিন্তাভাবনা নেই, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পুনর্বাসনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। শাবাশ, সিভিল সার্ভিস! তাদেরই একটি অংশের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে হাওরের এই দুরবস্থা বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। হাওরবাসীর মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সময়মতো বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করলে আগাম বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
লাখ লাখ মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন এখানে জড়িত। জনপ্রশাসনকেই এখানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হতে হবে। জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিতে হবে। দ্রুত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। এখানে রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করা হলে তা হবে অত্যন্ত নিকৃষ্ট মনের পরিচায়ক। আমরা চাই, যেকোনো ধরনের অবহেলা ও অনিয়ম কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হোক।