শাকিবের জন্য এলাহি আয়োজন

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আঁতুরঘর এফডিসিতে বেশ জাকজমকভাবে বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করা হয়। এই উৎসবে দেশের তারকা শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন— নন্দিত নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, বাপ্পারাজ, রুবেল, নায়িকা রত্না, মুক্তি প্রমুখ। তবে এফডিসিতে উপস্থিত থেকেও উৎসবে অংশ নেননি দেশ সেরা নায়ক শাকিব খান। শিল্পী সমিতির পাশের ফ্লোরে শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানে নির্মাতা রায়হান রাফির ‘তাণ্ডাব’ সিনেমার শুটিং করছেন এই ঢালিউড কিং। সন্ধ্যা নামার ঠিক কিছুক্ষণ আগে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার সেটে চক্কর দিই। শুটিং সেটের প্রবেশ মুখে বাউন্সার আর নিরাপত্তা প্রহরীদের প্রশ্নের মুখামুখি হই। এরই মধ্যে বাউন্সারের ওয়াকিটকিতে শোনা যায়, “সাংবাদিক ভাইয়েরা আসছেন তাদের রিসিভ করুন।” পরিচালকের এমন নির্দেশে আমাদের ভিতরে নিয়ে যান তারা। সেটে ঢুকেই বুঝতে পারি, কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা কোনো স্থানে প্রবেশ করেছি। চারপাশ ‘সোয়াট’ টিমে ঘেরা। যদিও এসবই শুটিংয়ের প্রয়োজনে। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন বাউন্সার। তাদের ওয়াকিটকিতে আসছে বিভিন্ন বার্তা। কুশলবিনিময়ের পর পরিচালক রায়হান রাফি শুটিং সেট ঘুরে দেখান। শুটিং সেটের প্রত্যেকটা জিনিসপত্র আসল। একটি টেলিভিশন স্টেশনের সেট নির্মাণ করা হয়েছে। স্টুডিও থেকে শুরু করে ওয়াশরুম সবই নতুনভাবে নির্মিত। সেটে পাওয়া যায় বলিউডের টেকনিশিয়ানদেরও। শাকিব খানের সঙ্গে দেখা করাতে নির্মাতা নিয়ে যান তার মেকআপ রুমে। মেকআপ রুমের সামনে দেখা মেলে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীর। আমাদের পরিচয় বার্তা শাকিব খানের কাছে পৌঁছানোর পর মেকআপ রুমে প্রবেশের অনুমতি মেলে। মেকআপ রুমে প্রবেশ করে অনুভব করি, সত্যি কোনো সুপারস্টারের মেকআপ রুমে আছি। এফডিসির সেই চিরচেনা মেকআপ রুম নয় এটি। শাকিব খানের জন্য নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কী নেই! সোফা, ফ্রিজ, এসি, দেয়ালে পেপার আর ফ্লোরে বিছানো কার্পেট। আমাদের পেয়ে শাকিব খান সেই পুরোনো দিনে ফিরে গেলেন। নানা বিষয়ে স্মৃতিচারণ করলেন। ঢাকাই চলচ্চিত্র বেশ কয়েকবার সংকটে পড়ে। তা উল্লেখ করে রাইজিংবিডিকে শাকিব খান বলেন, “অশ্লীলতা বাংলা সিনেমায় প্রথম আঘাত হানে। বাংলা সিনেমা বেশ ভালোই যাচ্ছিল। অশ্লীলতার কারণে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দেন দর্শক। হল সংখ্যা কমতে শুরু করে। আন্দোলন-সংগ্রাম করে সেটা বন্ধ করতে পেরেছি। এটা বাংলা সিনেমায় প্রথম ধাক্কা।” পরের পরিস্থিতি জানিয়ে শাকিব খান বলেন, “দেখুন, কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে এত প্রতিযোগিতার মধ্যেও দর্শক সিনেমা দেখেন। অশ্লীলতার ঝড় থামতেই দেশে আসে ডিজিটাল সিনেমা। সিনেমা ডিজিটাল আর সিনেমা হল অ্যানালগ। এ নিয়ে প্রযোজকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। মেশিন, সার্ভার নিয়ে সংকটে পড়ে ইন্ডাস্ট্রি। এসব যখন কাটিয়ে উঠছে, তখন দেশের পরিবেশ অস্থির হয়ে ওঠে। আমার ধারণা ছিল, এই অস্থির পরিবেশে দর্শক সিনেমা হলে যাবেন না।” ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’ সিনেমা। মুক্তির পর দারুণ সাড়া ফেলেছে। এ বিষয়ে শাকিব খান বলেন, “পট পরিবর্তনের পর সিনেমা মুক্তি দেওয়া এক ধরনের ঝুঁকি মনে হয়েছিল। কারণ, এই সময়ে দর্শক হলমুখী হবেন কি না এ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু যে ভয় পেয়েছি তার কিছুই হয়নি। সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ‘বরবাদ’ দেখছেন। জেনেছি, দর্শক চাপে লায়ন সিনেমাস, মধুবন সিনেপ্লেক্স’সহ বেশ কয়েকটি হলে মিডনাইট শো চলছে। এটা বাংলা সিনেমার জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। ঈদের আমেজ শেষ হলেও এখনো টিকিট নিয়ে হাহাকার, এটা শুনতে বেশ ভালো লাগছে।”

‘বরবাদ’ সিনেমার সাফল্যের পরে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার বাজেট বেড়েছে। এ তথ্য জানিয়ে শাকিব খান বলেন, “আমি সবসময় সব ধরনের দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কাটতে চেয়েছি। আমার টার্গেট ছিল গুলশান টু গুলিস্তানের দর্শক, সবাইকে হলমুখী করা। তা পেরেছিও। এখন সব শ্রেণির মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখছেন। তারই প্রমাণ ‘বরবাদ’। এই সিনেমার দর্শক সাড়ার ফলে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার বাজেট দিগুণ বেড়েছে। দর্শকদের প্রত্যাশাও অনেক। তাদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করছি। ‘তাণ্ডব’ সিনেমায় দর্শক নতুন কিছু দেখতে পাবেন। প্রত্যাশা করছি, এই সিনেমাও দর্শকদের ভালো লাগবে।”

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শাকিব খানের ঝুলিতে জমা পড়েছে বেশ কিছু পুরস্কার। এই তালিকায় অন্যতম বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৮ সালে সর্বশেষ এই পুরস্কার পান। এরপর আর কোনো পুরস্কার দেয়নি বাচসাস। এ পুরস্কার নিয়ে শাকিব খান বলেন, “বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয় বাচসাস। এই পুরস্কার অনেক সম্মানের। সিনিয়র শিল্পীদের মুখে আমরা অনেক শুনেছি।” আক্ষেপ করে দেশ সেরা এই নায়ক বলেন, “শুধু চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের দেশে তেমন কোনো পুরস্কার দেয়া হয় না। বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডে দেখা যাচ্ছে, কারা পুরস্কার পাচ্ছেন বা কেন পাচ্ছেন কিছুই বুঝি না। আর একটা বিষয় খুব অবাক লাগে তা হলো দ্বৈত পুরস্কার। দুজনকে কেন দিতে হবে। যাকে যোগ্য মনে হবে তাকেই দেন। এসব কারণে পুরস্কার অনুষ্ঠানে যেতে ইচ্ছে করে না। লাস্ট বাচসাস পুরস্কারে গিয়েছিলাম, ভালো লেগেছিল।” খুব শিগগির বলিউডের সিনেমার সঙ্গে ঢাকাই সিনেমা প্রতিযোগিতা করবে বলেই মত শাকিবের। তার ভাষায়, “বাংলাদেশের সিনেমা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি দিন লাগবে না। আশা করছি, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন বছর খানেকের মধ্যেই বাংলাদেশে ঢুকবে। সিনেমার বাজেট বেড়ে যাবে। বলিউডের সঙ্গে বাংলাদেশের সিনেমার প্রতিযোগিতা হবে।” সালমান খানের তারকা খ্যাতি এবং তার নিরাপত্তা নিয়েও কথা বলেন শাকিব খান। র্দীঘ আড্ডার মাঝেই পরবর্তী শটের সময় আসে। শুরু হয় মেকআপরে প্রস্তুতি। বলে রাখা ভালো, ‘তাণ্ডব’ সিনেমার লুক প্রকাশ না করতেই এফডিসির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি শাকিব খান। ‘বরবাদ’ সিনেমা দিয়ে প্রথমবারের মতো শাকিব খানের ‘এসকে ফিল্মস’ আন্তর্জাতিক পরিবেশনায় যুক্ত হচ্ছে। ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে ‘বরবাদ’ মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এমন খবরে আনন্দিত এই নায়ক। এ বিষয়ে শাকিব খান বলেন, “আমাদের সিনেমার বাজার বড় হচ্ছে। প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিরা দেশের সিনেমা দেখতে চান। অন্য দেশের দর্শকেরাও আমাদের সিনেমা দেখছেন। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। ইন্ডাস্ট্রিকে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে হলে সব দেশের মানুষের কাছেই সিনেমা নিয়ে যেতে হবে।”