শতভাগ নামাজী তৈরি করার পদ্ধতি

1152

—-আবদুল আলিম আল আসাদ


রসূল (স.) শতভাগ নামাজী তৈরি করার যে ফর্মুলা দিয়েছেন তা যদি আমরা সঠিকভাবে গ্রহণ করতাম তাহলে প্রত্যেক পরিবারে অবুঝ ও নাবালেগ শিশু, অমুসলিম ও জ্ঞানশূন্য অবস্থা ব্যতীত আমৃত্যু পর্যন্ত সর্বাবস্থায় বাঁধ্যতামূলকভাবে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বাঁধ্য হতাম। শতভাগ নামাজী তৈরি করার হাদীসটি সহীহ সনদে আবূ দাউদে বর্ণিত হয়েছে যাতে নিম্নোক্ত নির্দেশনা পাওয়া যায়, রসূলুল্লাহর (স.) শরী’আতের আদেশকে ফরজ হিসেবে গন্য করা হয়। তাহলে প্রত্যেক পরিবারের গার্ডিয়ানের প্রতি শরী’আতের নির্দেশ যে সে তার সন্তানের বয়স ৭ বছর পূর্ণ হলে নামাজের জন্য আদেশ করবে। এখানে প্রশ্নহল আদেশ কয়বার করবে? ৭ বছর পূর্ণ হলে ছেলে-মেয়েকে ডেকে একবার বলে দেবে তোমার নামাজের বয়স হয়েছে তুমি নামাজ পড়ে নিও, এভাবে? না, এভাবে না। প্রত্যেক দিন যেমন নামাজের ওয়াক্ত ৫বার ঘুরে ঘুরে আসে তাই অভিভাবকেও প্রতি দিন ৫বার আজান শুনে আদেশ করতে হবে। শুধু আদেশ চলবে ৭ থেকে ১০বছর পর্যন্ত পূর্ণ ৩বছর। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল ৩বছরে আদেশ করা হবে ৫৪৭৫বার। অতঃপর ১০ থেকে ১৫বছর বয়স পর্যন্ত পূর্ণ ৫বছর আজান শুনে প্রহার (বেত্রাঘাত) চলবে এর প্রত্যেক দিন ৫বার করে পরিসংখ্যান হবে ৯১২৫বার। ৩টি ফর্মুলার ২টি বাস্তবায়নে আমার অবজারভেশন ইনশা-আল্ল¬াহ শতভাগ নামাজী তৈরি হয়ে যাবে। কারণ আমাদের অধিনস্তরা একবার দুইবার তারপর অর্ডারমত কাজ না করলে আমরা তাদের সহজে ছাড়ি না। আর ৫৪৭৫ বার আদেশ ও ৯১২৫বার প্রহার (বেত্রাঘাত) করার পরও এ হুকুম অমান্য করে কেউ (অধিনস্তরা) পারপাবেনা। তৃতীয় স্টেপ: বালেগ তথা ১৫বৎসর বয়স অতিক্রম করার পর নামাজ আদায় না করলে তার বিরুদ্ধে শরী’আতের চূড়ান্ত ফয়সালা হল সর্বোচ্চ শাস্তি। যেহেতু সে (বে-নামাজী) কাফির, দ্বীন ধর্ম থেকে বহিস্কৃত আখেরাতে জাহান্নাম অবধারিত ও দুনিয়ার শাস্তির ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীস ও মহামতি ৪ ইমামের ৩জনই সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে রায় দিয়েছেন। আর তা কার্যকর করবে ইসলামি সরকার। ইনশা-আল্ল¬াহ ১ম ও ২য় ফর্মুলা অনুসরন করলেই শতভাগ নামাজী তৈরি হবে, পরিবারের বড় সন্তানের জন্য ফর্মুলাটি খাঁটিয়ে দেখলে অন্যান্যের ক্ষেত্রে তা বহু অংশে সহজ হবে। যেমন বড় সন্তানের বয়স ৭ বছর হলে দ্বিতীয় সন্তানের বয়স হবে ৪/৫বছর ও ছোট সন্তানের বয়স হতে পারে ২/৩ বছর আর এ সময় যদি আপনি বড় সন্তানকে হাদীসের বাস্তব শিক্ষা কাঁটায়-কাঁটায় ঠিক-ঠিকমত কাজে লাগান তবে বড় সন্তানের জন্য প্রযোজ্য হুকুম কার্যকরে ছোট ও মেঝো সন্তানরাও আগাম হুকুমের আওতায় পড়ে অনুপ্রাণীত হবে। তখন হুকুম মেনে চলা সহজ হবে। কোন হুকুম ফরজ হওয়ার জন্য আল-কুরআনের একটি শব্দ বা একটি আয়াতই যথেষ্ট। অথচ আল্লাহ তা’আলা কুরআনে ৮২ বার নামাজের হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং ইচ্ছে করে তা ছেড়ে দেয়ার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আল্ল¬াহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা ৮০ বারের বেশি যে বিষয়টির ব্যাপারে হুকুম দিলেন আর আপনি তা স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অবজ্ঞা ও লংঘন করলেন এবং ছেড়ে দিলেন। তারপরও আপনি নিজেকে মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারী বলে দাবি করেন! মরলে আবার জানাজাও আশা করেন! এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাইতো আল্ল¬াহর রসূল (স.) বলেছেন, “বান্দা ও কুফরীর মাঝে নামাজ-ই হলো সীমারেখা” (মুসলিম)। আমরা এখন এক প্রকৃতীর নামাজীর সম্পর্কে আলোকপাত করব, এই ধরনের মুসলিমদের সাক্ষাৎ পেতে আপনাকে মোটেই কষ্ট পেতে হবে না। এরা আপনার আমার আশপাশেই রয়েছে। আপনারই ছেলে কিংবা মেয়ে, বাবা কিংবা ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, পরিবার-পরিজনের মধ্যে এই প্রকৃতীর মুসলমান একজন আর দু’জন নয়; বরং এই শ্রেণির সংখ্যাই বেশি। ইফাবা’র একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত পড়া নামাজীর সংখ্যা শতকরা (২%) দু’জন আর জুমু’আর নামাজ পড়া ৮০ জন। এদের আবার বেশ কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে। যেমন, কেউ শুধু দুই ঈদ, সপ্তাহে জুমু’আ, রমাজানের ১মাস, পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে দু’এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকে। কেউ মনমানসিকতা ভালো লাগলে মাঝে মধ্যে পড়ে। কেউ সামাজিকতা রক্ষায় দায় ঠেকে মাঝে মধ্যে পড়ে। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, উপরিওই সকল ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা লোক দেখানো নামাজীদের সকলকেই ইসলাম প্রকৃতপক্ষে পাকা বেনামাজী বলে ঘোষণা দেয়। কারণ আল্ল¬াহ তা’আলা উল্লিখিত কোন পদ্ধতিতেই নামাজ ফরজ করেননি।