যান্ত্রিক যানবাহনে বিলুপ্তি’র পথে ঘোড়ার গাড়ী।

547

ঘোড়ায় টানা গাড়ি; টমটম নামেও সুপরিচিত। এক, দুই বা ততোধিক ঘোড়ায় টানা খোলা গাড়িকে টমটম নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তবে বিশেষভাবে এক ঘোড়ায় টানা গাড়িকে টাঙ্গা বলা হয়।ইংরেজ শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি  থেকে প্রথম ঢাকার রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি নামানোর ব্যবস্থা করা হয়। এদের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তাঘাটের উন্নতি শুরু হয়  প্রথমে ইট-সুরকি, সিমেন্ট, পরে পিচে মোড়া। ইংরেজদের পাশাপাশি দেশিয়  অভিজাত শ্রেণির লোকজনও ঘোড়ার গাড়িকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। বড় শহর থেকে ধীরে ধীরে মফস্বল শহরেও এর প্রচলন ঘটে। গঠন বৈশিষ্ট্য ও নামের দিক থেকে ঘোড়ার গাড়ির অনেক রকমফের দেখা যায়। কোথাও দুই চাকার, আবার কোথাও চার চাকার; কখনও দু’দিকে রঙিন কাচের জানালাসহ আবৃত আসন, আবার কখনও খোলা আসনবিশিষ্ট। চাকাগুলি বৃহৎ আকৃতির ও কাঠের তৈরী হয়ে থাকে। ঢাকা শহরে এ গাড়ি টমটম নামে পরিচিত। কোথাও কোথাও এটি টাঙ্গা, জুড়িগাড়ি কিংবা এক্কা গাড়ি নামেও পরিচিত। এসব গাড়ির চালকদের কোচোয়ান বা সহিস বলা হয়। আধুনিক যন্ত্রচালিত যানবাহনের ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার গাড়ির বিলুপ্তি সাধিত হয়েছে। পুরানো ঢাকার গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত অল্প কয়েকটি ঘোড়ার গাড়ি এখনও চলাচল করতে দেখা যায়। তবে রাজশাহী, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, নওগাঁ ও যশোর অঞ্চলের শহর ও গ্রামে এখনও মাঝে মধ্যে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল ও যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা যায়। বিশেষ কোনো উৎসব-দিবস বা অনুষ্ঠানে জাঁকজমকভাবে সাজানো সারি সারি ঘোড়ার গাড়ি এ যুগেও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রাচীনকাল থেকে সড়ক যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত ঘোড়ার গাড়ী আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তি’র পথে! কয়েক বছর আগেও কালে ভদ্রে দু’একটি গোড়ার গাড়ীর দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুল। এদিকে বিশ্বে আধুনিক যানবাহনের জন্য তৈরিকৃত সকল ইঞ্জিনের ক্ষমতাকে ঘোড়ার শক্তি (অশ্বশক্তি) হিসাবে পরিমাপ করা হয়ে থাকে এবং যে ইঞ্জিনের অশ্বশক্তি (হর্স পাওয়ার) যত বেশী তার পরিবহন ক্ষমতা ও মূল্যও তত বেশী। আধুনিক যানবাহনের ইঞ্জিনের স্পর্শে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক যানবাহনই কালপরিক্রমায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন, আধুনিকায়ন সাধিত হয়েছে। আবার ঐতিহ্যবাহী অনেক বাহনই হারিয়ে গেছে দৃশ্যপট থেকে। তেমনি মান্ধাতা আমলে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ঘোড়ার সাহায্যে চলমান ঘোড়ার গাড়ী বহুবিধ কারণে বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে দৃশপট থেকে। জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে গাঁও গেরামে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো ঘোড়ার গাড়ীর অবকাঠামো। আর কেটে পুরিয়ে গোলাকার করে পেরেক মেরে তৈরি করা হতো চাকা। ওই গাড়ীকে টেনে নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো ঘোড়াকে। এদিকে কালের আবর্তে ঘোড়ার গাড়ীর ব্যবহার কমে যেতে থাকলেও এখনও বিশ্বে আধুনিক সকল যানবাহনের জন্য তৈরিকৃত সকল ইঞ্জিনের ক্ষমতাকে ঘোড়ার শক্তি (অশ্বশক্তি) হিসাবে পরিমাপ করা হয়েছে। যে ইঞ্জিনের অশ্বশক্তি (হর্স পাওয়ার) যত বেশী তার পরিবহন ক্ষমতা ও মূল্যও তত বেশী হয়ে থাকে। সুপ্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীণ জনপদের কাঁচা মেঠো পথে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ী, মহিষের গাড়ী ও ঘোড়ার গাড়ীর বহুল প্রচলণ পরিলক্ষিত হতো। কিন্তু যখন থেকে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানী দ্বারা চালিত ইঞ্জিন দিয়েছে তৈরি যানবাহনের প্রচলণ ঘটতে থাকে তখন থেকেই মান্ধাতা আমলের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরিকৃত ‘ঘোড়ার গাড়ী’র কদর ও ব্যবহার হ্রাস পেতে থাকে।