টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ তে সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টির পর মিরপুরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও ইংলিশদের নাকানিচুবানি খাওয়ায় সাকিব-শান্ত-লিটনরা।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে ভর করে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলা বাংলাদেশের সামনে আজ ছিলো ইংলিশদের বাংলাওয়াশ করার হাতছানি। ব্যাটিং-বোলিং সব জায়গাতেই দুর্দান্ত খেলে ইংলিশদের ১৬ রানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ সম্পন্ন করে টাইগার বাহিনী।
বাংলাদেশের দেয়া চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ রানেই ইংলিশরা হারায় প্রথম উইকেট। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙে দলীয় ১০০ রানে। সেখান থেকে আর ৪২ রানে ৫ উইকেট হারায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তার চেয়েও বড় কথা, টাইগারদের অসাধারণ বোলিংয়ে ৯ উইকেট হাতে রেখেও শেষ ৪৮ বলে মাত্র ৪৭ রান নিতে পারে ইংলিশরা। ৬ উইকেটে থামে ১৪২ রানে।
তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ১ উইকেট নিতে খরচ করেন মাত্র ১৪। হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে দেন ২৯।
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লের প্রথম দুই ওভারে উড়ন্ত সূচনা করে দুই টাইগার ওপেনার। স্যাম কারান ও ক্রিস ওকসের করা দুই ওভারে বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলে লিটন দাস ও রনি তালুকদার। তৃতীয় ওভারে বল করতে আসা লেগ স্পিনার আদিল রশিদ দুই টাইগার ব্যাটারকে তার ঘূর্ণিতে জাদুতে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেন।
চতুর্থ ওভারে আবারও নতুন বোলারের হাতে বল তুলে দেন ইংলিশ অধিনায়ক। পেসার জফরা আর্চারের করা ওভারে এক চারে ৮ রান তুলেন লিটন দাস। আদিল রশিদের করা পঞ্চম অভারেও সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকে লিটন ও রনি।
পাওয়ার প্লে শেষে ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। তবে ইনিংসের অষ্টম ওভারে ব্যক্তিগত ২৪ রান করে আদিল রশিদের বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার রনি তালুকদার।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত ও লিটন দেখেশুনে খেলতে থাকে টাইগাররা। ১৩তম ওভারে সিরিজের প্রথম অর্ধশতকের দেখা পেয়ে যান লিটন। বাঁহাতি ব্যাটার নাজমুল শান্তকে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের উপর চড়াও হন টাইগার ওপেনার। আগের দুই ম্যাচে ছন্দহীন এ ডানহাতি ব্যাটার নিজের সরূপে ফিরেছেন।
তার বিধ্বংসী ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে বড় সংগ্রহের ভীত পেয়ে যায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
মোস্তাফিজের সেঞ্চুরি
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে শততম উইকেট নেওয়ার অনন্য মাইলফলকে মোস্তাফিজুর রহমান। মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের ৮১তম ম্যাচ খেলতে নেমে উইকেটের সেঞ্চুরি করেছেন। ইংলিশ ওপেনার ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে বাঁহাতি পেসার নিজের শততম উইকেট পেয়েছেন।
উইকেট সংখ্যায় মোস্তাফিজের চেয়ে এগিয়ে আছেন লাসিথ মালিঙ্গা (১০৭), ইশ শোধি (১১৪), রশিদ খান (১২৬), সাকিব আল হাসান (১৩০) ও টিম সাউদি (১৩৪)।
এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মোস্তাফিজ হয়ে উঠেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয়। নানা উত্থান-পতন, নানা অলি-গলি মোড় ঘুরে মোস্তাফিজ এখন বাংলাদেশের বোলিংয়ের অন্যতম বড় শক্তি। তার স্লোয়ার ও দুর্বোধ্য কাটার ব্যাটসম্যানদের জন্য ক্রমেই হয়ে উঠে ভয়ের কারণ।
টি-টোয়েন্টি মোস্তাফিজের সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাট। এই ফরম্যাটেই এবার নতুন কীর্তি গড়লেন। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার ম্যাচে অতিথিদের প্রতিরোধ ভাঙে মোস্তাফিজের বলে।
মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ১৪ রানে ১ উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
যেভাবে মোস্তাফিজের এক’শ:
প্রথম উইকেট- শহীদ আফ্রিদি
পঞ্চাশ উইকেট- কাইল জার্ভিস
একশ উইকেট- ভেভিড মালান।
ম্যাচ:
প্রথম উইকেট- প্রথম ইনিংস
পঞ্চাশ উইকেট- ৩৩তম ইনিংস
একশ উইকেট- ৮০ ইনিংস।
সেরা বোলিং:
২২ রানে ৫ উইকেট, প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড।
সবচেয়ে বেশি উইকেট:
জিম্বাবুয়ে (২৪)।
কোথায় কত উইকেট:
হোম (৪৯)
অ্যাওয়ে (২৮)
নিরপেক্ষ (২৩)।