বাংলাদেশ রেলওয়ের এক ডজন প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই। বরং কোনো কোনো প্রকল্পের প্রস্তুতি পর্বেই কেটে গেছে ৫ বছর। আবার কোনোটি শুরুর ২ বছরের কেটে গেলেও অগ্রগতি শূন্য। এমন অবস্থার পরও ওসব প্রকল্পের অনুকূলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে থাকছে ২ হাজার ৪৪৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার বড় অংকের বরাদ্দ। ফলে কাক্সিক্ষত ব্যয় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি- টেন্ডার আহ্বানে বিলম্ব, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনে দেরি, অর্থায়নের সমস্যা, মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প সংশোধন সংক্রান্ত নানা কারণে শুরুতে বাস্তবায়নে দেরি হয়েছিল। এখন অনেক কাজ এগিয়ে যাওয়ায় প্রকল্পে গতি আসবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর সেকশনে চার স্টেশনে নবনির্মিত তৃতীয় লাইনে কম্পিউটার বেইজ ইন্টারলকিং ব্যবস্থা সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ৭ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। সেজন্য ব্যয় ধরা হয় ২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ভৌত অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার কারণ প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন করাতেই চলে গেছে অনেক সময়। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন পায়। ফলে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। সেই সাথে ব্যয় ৯ কোটি টাকার বেশি বেড়ে হয়েছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্গঠন প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। মোট ব্যয় ধরা হয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু মার্চ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রকল্পটির প্রাথমিক প্রস্তুতিতেই পেরিয়ে গেছে সাড়ে ৫ বছর। এখন নতুন করে আরো ২ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মূলত অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি, বরাদ্দ না পাওয়া, পরামর্শক চুক্তিতে দেরি এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণেই প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। আগামী অর্থবছওে ওই প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, রেলওয়ের ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল-ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পেও অগ্রগতি নেই। ২০১১-এর জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কিন্তু মার্চ পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। এমন অবস্থার পরও আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তাছাড়া দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকার ওই প্রকল্পে মার্চ পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি আড়াই শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তাছাড়া রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ পাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পে অগ্রগতি শূন্য শতাংশ। গতিহীন অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর সেকশনে ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই, ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন, লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরালে ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ, চিনকি-আস্তান-চট্টগ্রাম সেকশনে ১১টি বিদ্যমান সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য়-৪র্থ ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ এবং খুলনা হতে মংলা পোর্ট পর্যন্তরেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।
এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘অধিকাংশ প্রকল্পে সমস্যা কেটে গেছে। অনেক প্রকল্পে সমস্যা না থাকলেও দেখা গেছে পেমেন্ট বাকি আছে, যখন পেমেন্ট করা হবে তখন দেখা যাবে অগ্রগতি অনেক হয়েছে। আগামী অর্থবছরের যাতে প্রকল্পগুলোর গতি বাড়ে এবং বরাদ্দ যথাযথভাবে খরচ করা যায় সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। যখন ডিপিপি তৈরি করা হয় তখন ওই সময়ের বাজার দর ধরা হয়। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করতেই চলে যায় অনেক বছর। ফলে মেয়াদ না বাড়লেও ব্যয় বাড়তে পারে।