পরাজয়ের মিছিল পেরিয়ে জয়ের অমৃত স্বাদ
এতোদিন বাংলাদেশ যা করে এসেছে, আজ তা-ই করলো শ্রীলঙ্কা। যদি এক শব্দে বলতে হয়, শ্রীলঙ্কা এলোমেলো। আর বাংলাদেশ গোছালো। গোছালো সেই পারফরম্যান্সের সুর ধরেই পরাজয়ের মিছিল পেরিয়ে জয়সূর্যর দেখা পেল বাংলাদেশ। ছয় ম্যাচ পর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। ক্যান্ডিতে বাংলাদেশ ৮৩ রানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ এ সমতা ফেরাল। এদিন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবকিছুতেই বাংলাদেশ এ প্লাস। গোল্ডেনও হতে পারত। দুয়েকটি ভুলে হয়েছে। ওগুলো না হলে শ্রীলঙ্কাকে দর্শক বানিয়ে পুরো ম্যাচটিতেই বাংলাদেশের আধিপত্য থাকত। টস হেরে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৭৭ রান করে। জবাবে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ৯৪ রানে। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস ছিল রোলার কোস্টার রাইডের মতো। এই নিচে নামে তো এই উপরে উঠে। পথ হারাতে সময় লাগে না…আবার ছন্দে ফিরতেও সময় নেয় না। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা একদমই যুৎসই হয়নি। ৭ রানে দুই ওপেনার সাজঘরে। পারভেজ হোসেন ইমন (০) ও তানজিদ হাসান (৫) দ্রুত সাজঘরে ফেরেন।
সেখান থেকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। অফফর্মে থাকা লিটনের সঙ্গী তাওহীদ হৃদয়। শুরুর আক্রমণটা তাওহীদ করেছিলেন। পরে লিটন সব আলো নিজের ওপর নিয়ে নেন। ৫৫ বলে ৬৯ রান যোগ করেন দুজন। ইনিংসের ১২তম ওভারে তাওহীদ ২৫ বলে ৩১ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি। মিরাজ এসে টিকতে পারেননি। ২ বলে ১ রান করে একই ওভারে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে আবার চাপে বাংলাদেশ। কিন্তু শামীম ক্রিজে এসে সেই চাপ গায়ে লাগতে দেননি। প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান তুলে ২৭ বরে করেন ৪৭ রান। ৫ চারের সঙ্গে হাঁকান ২ ছক্কা। লিটন ও শামীম পঞ্চম উইকেটে খেলার চিত্র পাল্টে দেন। ৩৯ বলে ৭৭ রান যোগ করেন দুজন। তাতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে প্রাণ ফিরে পায়। প্রবল চাপে ছিলেন লিটন। রানই পাচ্ছিলেন না। আজ ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১২ ইনিংস পর পেয়েছেন ফিফটি। ৫০ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৬ রান করেন তিনি। শেষ দিকে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে কেবল সাইফউদ্দিন যোগ করতে পারেন ৬ রান। শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে বিনুরা ফার্নান্দো নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন থুসারা ও থিকসানা।
জবাব দিতে নেমে পাওয়ার প্লে’তেই ইউটার্ন শ্রীলঙ্কার। ৩০ রানে তারা হারায় ৪ উইকেট। বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ ছিল কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট। এই জুটি ভাঙে শামীমের থ্রোতে। সরাসরি থ্রোতে শামীম ফেরান মেন্ডিসকে। এরপর শরিফুল ফেরান কুশল পেরেরা ও আভিশকা ফার্নান্দোকে। সাইফ উদ্দিন নেন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার উইকেট। ব্যাটসম্যানরা কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। শুরুর সেই ধাক্কা হজমের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও দাসুন শানাকা। ৩১ বলে ৪১ রান করেন করেন তারা। কিন্তু মাত্র ৬ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা আরও বিপদে পড়ে। সেখান থেকে তারা কেউ আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। নিশাঙ্কা ৩২, শানাকা ২০ রান করেন। ১৫.২ ওভারেই শেষ হয়ে যায় লঙ্কানদের ইনিংস। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদ ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম ও সাইফ উদ্দিন। দলকে বহু প্রত্যাশিত জয় এনে দেওয়ায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন লিটন দাস। আগামী ১৬ জুলাই কলম্বোতে হবে সিরিজের শেষ ম্যাচ।