যে ব্যক্তি দুনিয়া কামনা (নিয়াত) করে আমি তাকে (দুনিয়াতে) যা ইচ্ছা অতি সত্বর প্রদান করবো। অতঃপর তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করবো সে তাতে নিন্দিত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা (নিয়াত) করবে এবং মুমিন অবস্থায় তার (পরকালের) জন্য যথাযথ চেষ্টা সাধনা করবে, এমন লোকদের চেষ্টা কবুল হবে (সূরা বনি ইসরাইল, ১৮-১৯ আয়াত)। হে রসূল (স.)। আপনি বলে দিনÑ প্রত্যেকেই নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী কাজ করেন। অতঃপর আপনার পালনকর্তা বিশেষভাবে জানেন, কে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল পথে আছে (সূরা বনি ইসরাইল, ৮৪ আয়াত)। যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বৃদ্ধি করে দেই। আর যে কেউ দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে আর কিছু দিয়ে দেই এবং পরকালে তার কোনো প্রাপ্যই থাকবে না (সূরা আশ-শুরা ২০ আয়াত)। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, রসূল (স.) বলেছেন, যাবতীয় কাজের ফলাফল নিয়াতের ওপরই নির্ভর করে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি আপন নিয়াত অনুসারে অধিকারী হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হিজরত করে তার হিজরত আল্লাহ ও রসূলের উদ্দেশ্যেই হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন স্বার্থ উদ্ধারের আশায় কিংবা কোন রমণীকে (বিবাহ সূত্রে) আবদ্ধ হওয়ার (গোপন) বাসনায় হিজরত করে, তার হিজরত সেদিকেই হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করে (বুখারী ও মুসলিম)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসূল (স.) বলেছেন, (বিচারের দিন) আল্লাহ তোমাদের চেহারার সৌন্দর্য ও ধন সম্পদের দিকে লক্ষ্য করবেন না বরং তোমাদের অন্তকরণ (নিয়াত) ও আমলের (কাজের) দিকে লক্ষ্য করবেন (মুসলিম)। রসূল (স.) বলেছেন, কর্মছাড়া মৌখিক দাবি বিফল আর মৌখিক দাবি ও কর্ম উভয়ই বিনা নিয়াতে কার্যকরী নহে এবং মৌখিক দাবি, কর্ম ও নিয়াত আদৌ ফলপ্রসূ হবে না যদি তা সুন্নাত অনুযায়ী সম্পাদিত না হয় (হাকেম)। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রসূলের সময়ে লোকদের যাচাই করা হতো ওহি দ্বারা। কিন্তু (তার ইন্তেকালে) ওহি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমরা তোমাদের বাহ্যিক কাজের দ্বারা যাচাই করবো। অতএব কেউ আমাদের সামনে বাহ্যত ভালো কাজ করলে আমরা তাকে বিশ্বাস করবো এবং আমাদের নিকটবর্তী বলে মনে করবো, তার অন্তরের (নিয়াতের) অবস্থা অনুযায়ী বিচারের জন্য তো আল্লাহই রয়েছেন। আর কেউ আমাদের সামনে বাহ্যত খারাপ কাজ করলে আমরা তাকে মানবো না এবং তাকে বিশ্বাসও করবো না, সে যতই বলুক তার অন্তরের অবস্থা খুবই ভালো অর্থাৎ খুবই ভালো মানুষ (বুখারী)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোন গুনাহর কাজ করার ইচ্ছা (নিয়াত) করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গুনাহ লিখো না। তবে সে যদি গুনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গুনাহ লিখো। আর যদি তা আমার কারণে পরিত্যাগ করে তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ কর। আর যদি তা করে তাহলে কাজটি অনুপাতে তার জন্য দশগুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকী লিপিবদ্ধ করো (বুখারী)। নবী (স.) বলেছেন, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। বরং তা শুভ বলে মনে করা ভালো। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহর রসূল (স.) শুভ লক্ষণ কি? তিনি বললেন, এরূপ অর্থবোঁধক কথা যা তোমাদের কেউ শুনতে পায় (বুখারী)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারকারাহ নামক এক ব্যক্তির ওপর নবী করিম (স.) এর আসবাবপত্র দেখাশোনা করার দায়িত্ব ছিল। সে মারা গেলে রসূল (স.) তাকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করেছিলেন। সাহাবীরা এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, সে গনীমতের মাল থেকে একটি ‘আবা’ (কোর্তা) আÍসাৎ করেছিল (বুখারী)।