ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে যা করবেন শীতকালে
শীতকালে ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষামূলক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। শীতকালে তাই ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে প্রায় সবারই ঠোঁট ফেটে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। শুষ্ক বাতাস ও পানিশূন্যতার কারণে ঠোঁট রুক্ষ ও ফেটে যায়। এ সমস্যা এড়াতে প্রচুর পানি পান করা, ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা এবং নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি বা মোমযুক্ত লিপবাম লাগানো জরুরি। বাইরে বের হলে সানস্ক্রিনযুক্ত লিপবাম ব্যবহার করা উচিত। ঠোঁট চাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও পরে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। শীতকালে ফাটা হিল বা গোড়ালির সমস্যাও খুব সাধারণ। শুষ্ক ত্বকের কারণে গোড়ালিতে ফাটল সৃষ্টি হয়, যা অনেক সময় ব্যথাদায়ক হয়ে ওঠে। রাতে ঘুমানোর আগে ফাটা হিলে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে প্লাস্টিকের মোড়ক দিয়ে ঢেকে মোজা পরলে আর্দ্রতা ধরে রাখা যায় এবং উপকার পাওয়া যায়। শীতের ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন ঘন হাত ধোয়ার ফলে হাতের ত্বক খুব সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। এ সমস্যা এড়াতে দিনে একাধিকবার, বিশেষ করে সকালবেলা ও রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বাইরে বের হলে ঠাণ্ডা ও বাতাস থেকে হাত রক্ষার জন্য গ্লাভস পরা অত্যন্ত উপকারী। অ্যাকজিমা হলো ত্বকের একটি প্রদাহজনিত রোগ। এর লক্ষণ হিসেবে শুষ্ক, লালচে ও চুলকানিযুক্ত ত্বক দেখা যায়। শীতকালে এ সমস্যা বেড়ে যায়। অ্যাকজিমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেলভিত্তিক মলম দিয়ে ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজ করা দরকার। অতিরিক্ত ঘাম বা গরম এড়াতে স্তরে স্তরে পোশাক পরা উচিত। প্রয়োজনে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সোরিয়াসিস সাধারণ শুষ্ক ত্বকের চেয়ে বেশি জটিল একটি সমস্যা, যা ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। শুষ্ক বাতাস, ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও সূর্যালোকের অভাব শীতকালে এ রোগকে আরও তীব্র করে তোলে। এ ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হালকা গরম পানিতে গোসল করা, নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা এবং ঘরে হিউমিডিফায়ার রাখা উপকারী। সঠিক চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের কারণে চুলকানির সমস্যাও বেড়ে যায়। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও পর্যাপ্ত তরল পান করা অত্যন্ত জরুরি। গোসলের সময় হালকা গরম পানি ও মৃদু সাবান ব্যবহার করা উচিত এবং গোসলের পর ত্বক আলতোভাবে মুছে গ্লিসারিনভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। প্রয়োজনে দিনের মধ্যে একাধিকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় রোদ ও ঠাণ্ডা বাতাসে থাকা এড়িয়ে চলা উচিত।শীতকালে খুশকি ও মাথার ত্বকের চুলকানি অনেকের জন্য বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উপকারী। তবে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়। প্রতিদিনের পরিবর্তে প্রতি দুই থেকে তিন দিন পর পর চুল ধোয়া ভালো। চুল নরম ও আর্দ্র রাখতে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত এবং অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে বের হলে টুপি ব্যবহার করে চুল শীতের প্রভাব থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
ডা. তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী
লেখক : চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ