তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের  কিংবদন্তির নেত্রী ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আদিবাসী ও বাঙ্গালী কৃষক সমাবেশ। আজ সকালে জেলা শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাঁওতাল, ওরাও, রাজোয়াড়সহ  সমতলর বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা  শোভাযাত্রা শুরু করেন। এতে বাঙ্গালীরাও যোগ দেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ আদিবাসীররা তাঁদের নিজ নিজ গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে এবং ঢাক-ঢোল-মাদলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ঘন্টারও বেশী সময় ধরে শহর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা আবার অনেকের হাতে ছিল লাল পতাকা। শোভাযাত্রাকালে সড়কের দুুুধারে মানুষজন দাঁড়িয়ে পড়ে আকর্ষণীয় আদীবাসী নৃত্য, বাজনা ও নিজস্ব ভাষার গান উপভোগ করেন।

দুপুরে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানের নির্ধারিত স্থান পৌর পার্কে গিয়ে আরেক দফা নাচ-গানের পর আলোচনা সভায় মিলিত হয়। ইলা মিত্রের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পলিষদ আহ্বায়ক বঙ্গপাল সর্দারের সভাপতিত্বে  আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় আদাবাসী পলিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচিত্রা তির্কি, আদিবাসী লেখক ও গবেষক মিথু শিলাক মুর্মু,রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক আলমগীর স্বপন,ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক ড. আমীরুল ইসলাম কনক, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়,জাতীয় আদীবাসী পরিষদ সাধারণ সম্পাদক বিমল রাজোয়াড়,উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের  সভাপতি হিংগু মুর্মু,তথ্য সম্পাদক প্রদীপ হেমব্রম, সহ অনেকেই।

বক্তরা  বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের রানীমা খ্যাত ইলা মিত্র ১৯২৫ সালের এদিনে এক সম্ভান্ত্র  বাঙ্গালী হিন্দু পনিবাওে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চশিক্ষিত ইলা মিত্রের বিয়ে হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের জমিদার রমেন মিত্রের সঙ্গে। স্বামীর গ্রামে তিনি মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশ আমলের শেষে কৃষকদের তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে  আন্দোলনের নায্যতা বুঝেই তিনি  নাচোলের রাওতারা গ্রামে গিয়ে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই  এলাকাতেও তাঁর স্বামীর জমিদারি ছিল। আন্দোলন  সশস্ত্র সংঘাতে রুপ নিলে পুলিশসহ  হতাহতের ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার হন ইলা মিত্র। চলে অমানুষিক নির্যাতণ।

বক্তরা বলেন, বিপ্লবী ইলা মিত্র  যে শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন তা শেষ হয় নি। এখনও চলছে। কৃষক এবং আদাবাসীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চণার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। বিশেষ করে আদীবাসীরা প্রায়ই জমি কেন্দ্রিক সমস্যার শিকার হচ্ছের। তাঁরা  সকল অত্যাচারের প্রতিকার দাবি করেন।