টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হাসি হাসলেন যারা

ডাউনটাউন শহরের শরৎ মানেই টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (টিআইএফএফ)। উৎসবের ৫০ বছরের যাত্রা শেষে এবারের আসর ছিল এক ঐতিহাসিক আয়োজন। প্রায় ৭০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা ২৯১টি চলচ্চিত্রের ১২০০-এর বেশি প্রদর্শনী আর শতাধিক প্রিমিয়ার নিয়ে টিআইএফএফ রূপ নিয়েছিল এক বৈশ্বিক মিলন মেলায়। শহরের আকাশ ছুঁয়ে থাকা আলোকসজ্জা আর উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি লালগালিচায় জ্বলে উঠেছেন দ্যুতি ছড়ানো তারকারা। এ বছর ঝলমল করেছে ডোয়াইন জনসন, এমিলি ব্লান্ট, গিয়েরমো দেল তোরো, রিয়ান জনসন, জাহ্নবী কাপুর, ক্লোয়ি ঝাও, পার্ক চ্যান-উক, পল মেসকাল, জেসি বাকলি, এমিলি ওয়াটসনসহ আরও অনেক বিশ্বখ্যাত তারকার উপস্থিতিতে। লালগালিচার এই উজ্জ্বল মুহূর্তগুলো শুধু টরন্টোকেই নয়, পুরো চলচ্চিত্র দুনিয়াকে মনে করিয়ে দিয়েছে–সিনেমা এখনও মানুষের স্বপ্ন, আবেগ আর ভালোবাসার সবচেয়ে বড় সংযোগ। বিশ্বের অন্যান্য চলচ্চিত্র উৎসবের থেকে টিআইএফএফের ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে এতে দর্শকদের পছন্দকে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করা হয়। এবারের আসরেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। উৎসবে রজার্স উপস্থাপিত পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ক্লোয়ি ঝাও-এর ‘হ্যামনেট’ সিনেমা। আন্তর্জাতিক বিভাগে সেরা হয়েছে পার্ক চ্যান-উকের ‘নো আদার চয়েস’, ডকুমেন্টারি বিভাগে ব্যারি অ্যাভরিচের ‘দ্য রোড বিটুইন আস: দ্য আলটিমেট রেসকিউ’ এবং মিডনাইট ম্যাডনেস বিভাগে জয়ী হয়েছে ম্যাট জনসনের ‘নিরভান্না দ্য ব্যান্ড দ্য শো দ্য’ সিনেমাটি।

পিপলস চয়েসে সেরা যারা
দর্শক ভোটে নির্ধারিত পিপলস চয়েস পুরস্কার সবসময়ই উৎসবের মূল আকর্ষণ। উৎসবের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও এটি। এবার রানারআপ হয়েছে গিয়েরমো দেল তোরোর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এবং রিয়ান জনসনের ওয়েক আপ ডেড ম্যান: এ নাইভস আউট মিস্ট্রি। আন্তর্জাতিক বিভাগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে যথাক্রমে জোয়াকিম ট্রিয়ারের সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু এবং নীরজ ঘাইওয়ানের হোমবাউন্ড।

পিপলস চয়েসে সেরা ফ্রান্সের ‘টু দ্য উডস’
শর্ট কাটস বিভাগে সেরা আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনা টক মি। কানাডিয়ান শর্ট ফিল্মে জয়ী হয়েছে দ্য গার্ল হু ক্রাইড পার্লস এবং প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম বিভাগে সেরা হয়েছে ফ্রান্সের টু দ্য উডস।

আন্তর্জাতিক সমালোচক ও নেটপ্যাক পুরস্কার পেলেন যারা
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচকদের ফিপ্রেসচি পুরস্কার জিতেছে লুসিয়া অ্যালেনার ইগলেসিয়াসের ফোরাস্তেরা। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য প্রদত্ত নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড গেছে ভারতীয় নির্মাতা জিতাঙ্ক সিংহ গুর্জরের ইন সার্চ অব দ্য স্কাই (বিমুক্ত)-এর ঝুলিতে।

কানাডিয়ান চলচ্চিত্র বিভাগের সেরারা
কানাডিয়ান চলচ্চিত্র বিভাগেও এসেছেন নতুন প্রতিভারা। বেস্ট কানাডিয়ান ডিসকভারি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে সোফি রমভরীর ব্লু হেরন। বেস্ট কানাডিয়ান ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে জাকারিয়াস কুনুকের উইক্সারিংগিটার (রং হাজব্যান্ড)।

প্ল্যাটফর্ম অ্যাওয়ার্ড
উৎসবের প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ প্ল্যাটফর্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা হয়েছে ভ্যালেন্টিন ভাসিয়ানোভিচের টু দ্য ভিক্টরি! ব্যতিক্রমী ভিজ্যুয়াল আর দারুণ বর্ণনার জন্য প্রশংসিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। সম্মানসূচক উল্লেখ পেয়েছে জর্জ প্যালফি’র হেন। এবারের উৎসবে অংশ নেওয়া ২৯১টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ২০৯টি নতুন ফিচার, ৬টি পুনর্নির্মিত ক্ল্যাসিক, ১০টি প্রাইমটাইম সিরিজ, আর ৬৬টি শর্ট ফিল্ম। এবারের উৎসবে লালগালিচা যেন ছিল এক উৎসবময় দিগন্ত, যেখানে শুধু চলচ্চিত্রই নয় তারকারাও আলো ছড়িয়েছেন। দ্যুতি ছড়িয়েছেন ক্লোয়ি ঝাও, পার্ক চ্যান-উক, গিয়েরমো দেল তোরো, রিয়ান জনসনসহ যারা প্রধান পুরস্কারজয়ী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পল মেসকাল, জেসি বাকলি, যারা হ্যামনেট-এ অভিনয়ের জন্য নজর কাড়েন। বড় বড় উদ্বোধনী গালা ও প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন সিড্রি জিমেনেজ, ক্লেয়ার ডেনিস, অলিবিয়র আসায়াসসহ অনেক আন্তর্জাতিক পরিচালক তারকারা, যারা তাদের নতুন প্রিমিয়ার ফিল্মগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে এলেন। লালগালিচার র্যা ম্পে ঝলসে উঠেছিল পোশাক, রুচি, সাদাসিধে অনুভূতির সংমিশ্রণ–সিনেমার, শিল্প মানুষের মিলন মেলা।