জাদুকরের পায়ে শেষ জাদুর অপেক্ষা

34

জাদুকরের পায়ে শেষ জাদুর অপেক্ষায় শুধু কি আর্জেন্টাইনরাই? না, গোটা বিশ্ব তার জাদু দেখতে অধীর হয়ে আছে। পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিওনেল মেসির ভক্তরা তার হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি দেখার প্রতীক্ষায়। ফ্রান্সের বিপক্ষে তার মুগ্ধতা ছড়ানো একটি রাত কোটি ভক্তের সারাজীবনের চাওয়া পূরণ করে দেবে।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা ডিয়েগো ম‌্যারাডোনা আলবিসেলেস্তেদের জেতালেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপের শিরোপা। ঠিক এক বছর পর আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে জন্ম মেসির। কে জানতো, ৩৬ বছর পর এই মেসিই আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় শিরোপা জেতার স্বপ্নের কাছাকাছি নিয়ে যাবেন? কেউ ভাবেনি। ফুটবল বিধাতা তাকে নিয়ে গেছে এমন উচ্চতায়।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরের রোসারিও শহরে জন্ম মেসির। যে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পারানা নদী। খামার কেন্দ্রিক এই শহরেই প্রথম ফুটবলে লাথি দিয়েছিলেন মেসি। এখন এই শহরের অলি-গলি, দেয়াল-ব‌্যানারে শুধু তারই ছবি। কেন-ই বা হবে না, মেসির জন‌্যই তো রোসারিও প্রসিদ্ধ হয়েছে বিশ্বজুড়ে। রোসারিওর খুব কাছের শহর সেরোডিনো। যে শহরে মেসির ১২/১৮ মিটার (৪০/৬০ ফিট) একটি জার্সি উড়ানো হয়েছে। যা এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জার্সি বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

মেয়র জুয়ান পিও ড্রোভেট্টার নিজের ইচ্ছাতেই মেসিকে এতো বড় সম্মান জানিয়েছে সেরোডিনো। ‘লিওনেল স্কালোনি যেভাবে দলটাকে নিয়ে লড়াই করলো… এখনও গা শিউরে উঠে। এর পেছনে কাজ আছে, হৃদয় আছে, একতা আছে, রক্ত আছে।’, বললেন নগরপিতা।

মেসি ২০১৪ সালেও অমরত্বের স্বীকৃতির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের ডেরায় সেবার জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। চোখের জলে শেষ হয় মেসির বিশ্বকাপ। ৮ বছর পর একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফুটবল জাদুকর। এবার প্রতিপক্ষ আরেক ইউরোপিয়ান হেভিওয়েট ফ্রান্স। মেসির জন‌্য সেজেছে রোসারিও। আর্জেন্টিনার পতাকা, মেসির জার্সি, তার মুখ, পা, তার হাতে শিরোপা উঁচিয়ে ধরা প্রতিটি ছবি আঁকা হয়েছে নগরীতে।

মেসির প্রতিবেশী আলেজ্রাডা ফেরিরিয়া জানিয়েছেন, ‘ভিনগ্রহের মেসির জন‌্য ম্যুরাল বানানো হচ্ছে। যেটা তার শৈশবের বাড়ির কাছে থাকবে।’ মেসির শৈশবকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন আলেজ্রাডা। মেসির সঙ্গে তার মায়ের ও মেয়ের ছবি দেখিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘ও মজার এবং  ফুটবল দ্বারা প্রভাবিত এক শিশু ছিল। সবার সঙ্গে ওর সখ‌্যতা গড়ে উঠে ফুটবল নিয়ে। ওর বন্ধুবান্ধবগুলোও ছিল একই রকম। ওটাই ছিল তার জীবন। সত‌্য বলতে ফুটবলের সেরা স্বীকৃতি তার প্রাপ‌্য। তার চারপাশ ভালোবাসায় মোড়ানো। সহজাত নেতা সে। ও আমাদের সবাইকে নিশ্চয়ই খুশি করবে। ওকে পেয়ে আমরা এমনিতেই চ‌্যাম্পিয়ন। এখন শুধু ওকেই চ‌্যাম্পিয়ন হতে হবে।’

মেসির হাতে এবার শিরোপা দেখছেন তাকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া ৮ বছরের পেড্রো ইবানেজ। মেসির পুরোনো ক্লাব নিউয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবের যুব দলে খেলছেন পেড্রো। তার বিশ্বাস, ‘আমরাই বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছি। এখানেই সব শেষ। আমাদের দল যেভাবে খেলছে যেভাবে এক হয়ে এগিয়েছে তা সত‌্যিই অবিশ্বাস‌্য। মনে হচ্ছে সবাই মেসির জন‌্যই খেলছে। বিশ্বকাপের শিরোপা তার দরকার এবং সব রেকর্ড ভেঙে তার হাতেই যাবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।’