চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিকের শিক্ষকদের মানববন্ধন

“দীর্ঘদিন যাবৎ বৈষম্যের শিকার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক/মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত ‘স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এসটিইপি)’ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকদের ৫০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ”র দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বারঘরিয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বেলা ১১টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনার পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন- পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর (নন-টেক) মো. আব্দুল কাদের জিলানী, ইন্সট্রাক্টর (টেক) নাজমা খাতুন, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (টেক) সালাউদ্দিন ইউসুফসহ অন্যরা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির ইন্সট্রাক্টর (নন-টেক) মো. আজিজুর রহমান।
‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকল ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফিরাত ও আহত সকল ছাত্র-জনতার দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের হাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমাদানের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি তুলে দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়- দক্ষ জনশক্তি ব্যতীত কোনোভাবেই একটি দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। দেশ-বিদেশে শ্রম বাজারে বাস্তব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও দেশের কারিগরি শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে ‘স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’টি ২০১০ থেকে শুরু হয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সফল এই প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বিশ^ব্যাংক, কানাডা, আইডিএ এবং বাংলাদেশ সরকার। এটিইপি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের নিকট কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলা এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধির মাধ্যমে দরিদ্রতা ও বেকারত্ব দূর করা।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তীব্র শিক্ষক সংকটে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা যখন অচলাবস্থা তখন ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই ধাপে সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শূন্য পদের বিপরীতে (প্রকল্প মেয়াদে) মোট ১০১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, যার মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭৩৮ জন শিক্ষক। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ন্যূনতম শিক্ষাগত যে যোগ্যতার আলোকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় তা এসটিইপি প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একই যোগ্যতা এবং প্রযোজ্য সরকারি বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ, সিভিল সার্জন কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এসটিইপি প্রকল্পটির মেয়াদ দুই ধাপে বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হয়। এই প্রকল্পে শিক্ষক নিয়োগের পূর্বে ২০০৯ সালে কারিগরি শিক্ষার হার ছিল ১ শতাংশ, যা বর্তমানে ২২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছ। প্রকল্পটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক বর্তমানে কর্মরত ৭৩৮ জন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২০১৯ সালের ৩০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশে এই শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সমাপ্ত এই প্রকল্পের শিক্ষকদের ‘রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষক’ নামেও অবহিত করা হয়। বর্ণিত শিক্ষকগণকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১২ মাসের বেতন-ভাতাদি থোক বরাদ্দের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একাধিকবার থোক বরাদ্দের আবেদন করা হলেও অর্থ বিভাগ হতে বরাদ্দ না পাওয়ায় সুদীর্ঘ ৫০ মাস বেতনবিহীন অবস্থায় শিক্ষকগণ তাদের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক সুচিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। অপরদিকে প্রকল্প শেষ হওয়ার সুদীর্ঘ ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তর প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন করা হয়নি। সমাপ্ত প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সমাপ্ত প্রকল্পটি শিক্ষকদের বর্তমানে গড় বয়স ৩৬ থেকে ৪০ বছর এবং কর্মকালীন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ১০ থেকে ১২ বছর সুদীর্ঘ ৫০ মাস বেতনবিহীন অবস্থায় এবং চাকরি রাজস্বকরণে বিলম্ব হওয়ায় শিক্ষকগণ চরমভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়েছেন। এ অবস্থায় সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক/মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত সমাপ্ত এসটিইপি প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে প্রক্রিয়াধীন শিক্ষকদের ৫০ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের চলমান প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্মারকলিপিতে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়।