চাঁপাইনবাবগঞ্জে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধসহ ১১ দাবিতে মানববন্ধন
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও বিচারের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। রবিবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁপাইনবাবগঞ্জের আয়োজনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
সবস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ১১টি দাবি তুলে ধরা হয়।
সনাক সভাপতি সাইফুল ইসলাম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সূচনা বক্তব্য দেন সহসভাপতি আশরাফুল আম্বিয়া সাগর।
নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেনÑ সনাক সদস্য সেলিনা বেগম, গোলাম ফারুক মিথুন, ওয়ালিউল আজিম, মজিবুর রহমান, সনাকের জেন্ডার বিষয়ক উপকমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক, ইয়েস সদস্য কুশল কুমার শীল, টিআইবির ইন্টার্ন-প্রোগ্রাম নাজমিন খাতুন।
মানববন্ধনে টিআইবি’র বিভিন্ন দাবি সংবলিত ধারণাপত্র পাঠ করেন সনাক সদস্য ড. দীপালী রাণী দাস ও ইয়েস সদস্য মো. ইসরাফিল। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন টিআইবির এরিয়া কোঅর্ডিনেটর শফিকুল ইসলাম।
টিআইবি’র ১১টি দাবি হচ্ছেÑ
১. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ‘নতুন বাংলাদেশ’র মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং সব ধরনের যৌন নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্য প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এসব অপরাধের সাথে জড়িতদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি অপরাধের শিকার পরিবারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা।
২. সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার ও বিদ্যমান আইনসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা।
৪. সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, পেশাজীবী সংস্থা, সকল প্রকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের সমঅধিকার ও সমমর্যাদার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণাসহ চর্চা প্রতিষ্ঠার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা) ও ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান)কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্বশর্ত হিসেবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নানা অজুহাতে যত্রতত্র হেনস্থা রোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সকল প্রকার নারী অধিকার হরণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকেÑ বিশেষ করে প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ, শুদ্ধাচার, জবাবদিহিতা ও সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করা।
৭. জেন্ডার সমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিত, ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সুলভ করা এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিশেষায়িত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
৮. যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাঙ্গনে বা সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছেনÑ তাদের উৎসাহিত, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদান করা।
৯. মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সকল প্রতিষ্ঠানে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাসহ নারীবান্ধব অভিযোগ প্রদান ও নিরসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে; নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধে ব্যক্তির রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা ও প্রভাব বিবেচনা না করে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা।
১০. নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সাধারণ জনগণের ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষে কার্যকর প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
১১. জাতীয় হেল্পলাইন ও অভিযোগ জানানোর হটলাইন নম্বরগুলোর প্রচার ও কার্যকরতা বৃদ্ধি করতে হবে।