চাঁপাইনবাবগঞ্জে চক্ষু শিবিরে সেবা পেলেন ২০০ এর বেশী দরিদ্র রোগি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার রানীহাটী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজে বিনামূল্যের চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা শিবিরে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ২০০ এর বেশী রোগিকে। যারা শিবিরে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই দরিদ্র। রোগিদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। আয়োজকরা বলছেন, এটি এখন জেলার সবথেকে বড় ও ধারাবাহিক বিনামূল্যের চক্ষু শিবির। গত কয়েক বছরের ন্যয় এবারও শিবির আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র। সার্বিক সহায়তা করে ঢাকার ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং বসুন্ধরা আই হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইনষ্টিটিউট। চক্ষু শিবিরে ৫০৬ জন রোগি নির্বাচিত করা হয় যাদেও ঢাকার বসুন্ধরা চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছানি (ক্যাটার্যাক্ট) অপারেশন করা হবে। বিনামূল্যে সংযোজন করা হবে লেন্স। প্রয়োজনীয় সকল ঔষুধ, ড্রপ, চশমা দেয়া হবে। ঢাকা যাতায়াতের জন্য কখনও রোগিদের সামাণ্য কিছু খরচ হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আয়োজকরা ডোনার যোগাড় করে সেটিরও ব্যবস্থা করেন। ফলে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র রোগিরা যারা কখনও চিকিৎসা করেন নি বা চোখ থাকতেও দীর্ঘদিন পৃথিবীর আলো বঞ্চিত তাঁরা উপকৃত হন সবথেকে বেশি। আবার কিছু রোগির ফলোআপ চিকিৎসার দরকার হয়। তারা শিবিরে এসে সে কাজটিও সেরে নেন।
শিবিরের নারীদের কাতারে দাঁড়ানো জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিায় ইউনিযনের সতেররশিয়া গ্রামের মেসনারা বেওয়া বলেন, জীবনে প্রথম চোখের ডাক্তার দেখাতে এসেছি। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। ছেলেদের কাছে থাকি। চক্ষু ক্যাম্পের মাইকিং শুনে জানতে পারি। এরপর গ্রামের আরও ৮/১০ রোগির সাথে ক্যাম্পে এসেছি। একই এলাকার আমিনা বেগম বলেন, রাতে চোখে দেখি না। দিনে ঝাপসা দেখি। বাড়ির কাছে ডাক্তার আসাতে দেখাতে এেিসছ। শহরে যেয়ে খরচ করে দেখাতে পারব না।চক্ষু শিবিরের পাশেই বহরম গ্রামে বাড়ি আকবর আলীর। আগে কৃষিকাজ করতেন। তিনি বলেন, ডাক্তারের ব্যবহার ভাল। মেশিন দিয়ে চোখ দেখেছেন। এখন ঢাকায় যাব অপারেশন করতে। তাঁর ভাতিজা এমরান আলী বললেন, দুই চোখ এই ক্যাম্পের সাহায্যে অপারেশন করিয়েছি। বসুন্ধরা হাসপাতালের পরিবেশ খুবই সুন্দর। এখন চাচার সাথে এসে পরীক্ষা নিলীক্ষা করে নিলাম। সব ঔষুধ পেলাম বিনা পয়সায়। চশামার পাওয়ার ঠিক করে দিয়েছে ডাক্তার। জেলা শহরের বালবাগান মহল্লার সাবিনা বেগম বলেন, একবার ছানি অপারশেন করতে গেছিলাম। হার্টের সমস্যার জন্য করতে পারিনি।হার্টের চিকিৎসা করিয়েছি। এবার অপারশেন করার জন্য ক্যাম্পে এসেছি। এভাবে সারাদিন শিবিরে আসা রোগিরা নিজেদের সমস্যার কথা বলেন। বলেন, জীবন যদ্ধের গল্প। নানা সমস্যা। অনেকে নিজের অবস্থা তুলে ধরে কান্না শুরু করেন। অনেকেই স্লিপে তাদের মোবাাইল নং লিখে চান। অনেকে বলেন, আমার তো মোবাইল নাই। কি করব? আয়োজকরা সকলের প্রতি মনোযোগী। আপ্রাণ চেষ্টা তাঁদের যেন সকলে ঠিকমত চিকিৎসা পান।
বসুন্ধরা আই হসপিটালের ১০ জনের টিমের প্রধান ডা.মজুমদার গোলাম রাব্বি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে ভাল লাগছে। আয়োজকরা অতিথি পরায়ন। ক্যাম্পের পরিবেশ চমৎকার। তাঁর টিমে অপটোমেটিস্ট, টেকনোলজিষ্ট, ফার্মাসিষ্ট ও দ্জুন চিকিৎসক রয়েছেন বলে জানান ডা. রাব্বি। আরও দুজন চক্ষু বিশেষঞ্জ স্থানীয়ভাবে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ছানি পড়া রোগির সংখ্যাই বেশি। এছাড়া নেত্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া(ডিসিআর) এবং মাসুরা আক্রান্ত রোগিও রয়েছে। টেষ্ট করে তাঁদের রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে। এসব রোগির অপারেশনে সামাণ্য কিছু খরচ লাগে।
কলেজের শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী শিবিরে নিরলসভাবে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করছে। দ্বিতীয় বর্ষের আনিকা বলল, মানুষের সেবায় কাজ করেত ভাল লাগে। গত বছরও ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবী ছিলাম।
চিকিৎসা সহয়তা কেন্দ্রের কোষাাধ্যক্ষ এবং শিবিরের অন্যতম সংগঠক জহিরুল ইসলাম মাখন বলেন, শুরু থেকে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রের সাথে আছি। প্রচার প্রচারণা সং সাংগঠনিক সব কাজই করি। ঢাকায় রোগি নিয়ে যায়। হাসপাতালটি মানসম্মত। এই কাজে পরিশ্রমও করতে হয় প্রচুর। নিজের পকেট থেকেও অনেক খরচ হয়। তবুও দরিদ্র মানুষের সেবা করে আনন্দ পাই।
প্রধান সংগঠক এবং চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, সমগ্র জেলা এমনকি জেলার বাইওে রাজশাহী, নওগাঁ এমনকি বগুড়া থেকেও রোগি এসছে। গ্রামে চক্ষু রোগির সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ বের করতে প্রয়োজনে গবেষণা করা দরকার। তিনি বলেন, ঢাকায় অপারেশন হওয়া রোগিদের জন্য যদি পৃথক ফলোআপ ক্যাম্প করা যেত বা জেলা হাসপাতালে কোন ব্যবস্থা করা যেত তবে চিকিৎসার মান আরও উন্নত হত। চিকিৎসা ঠিকমত সম্পূর্ণ হত।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ হলরুমে উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে চিকিৎসা সহয়তা কেন্দ্রের সভাপতি ডা. আনোয়ার জাহিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাকিব হাসান তরফদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছমিনা খাতুন, কলেজ অথ্যক্ষ রফিউজ্জামান, সাবেক অধ্যক্ষ মো নুহু, ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলী, স্থানীয় সমাজসেবী ডা.আইনাল হক প্রমুখ। প্রশাসনের কর্মকর্তারা আয়োজনের প্রশংসা করে সহায়তার কথা জানান।