চাঁপাইনবাবগঞ্জে “ক্যারিয়ার ফেস্টিভাল” বা “সম্ভাবনার উৎসব” অনুষ্ঠিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে “ক্যারিয়ার ফেস্টিভাল” বা “সম্ভাবনার উৎসব” অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ক্যারিয়ার ফেস্টিভাল চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। জেলার হরিমোহন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায়, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায়, দিনব্যাপী এই ফেস্টিভালের আয়োজন করে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা অফিস।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল- ইউএনএফপিএ টেকনিক্যাল অফিসার সুরাইয়া সুলতানার সঞ্চালনায় ফেস্টিভালে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিভাগীয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ফিরোজ উদ্দিন খলিফা, রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও যুগ্মসচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ। এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, শুধু পড়াশোনা জানলেই আর ভালো ছাত্র-ছাত্রী হলেই যে, সেই জীবনে বড় হবে, বড় কিছু করতে পারবে সেটা কিন্তু নয়। বেশী পড়াশোনা ছাড়াও জীবনে এমন অনেক কিছুই করা যায় , যা অনেক সম্মানের। শুধু নিজের প্রতিভাকে ভালো কাজের জন্য বিকশিত করতে হবে। আমাদের সবার মধ্যেই সেই পটেনশিয়াল আছে। শৃধু সঠিক সময়ে সেটা বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে। কারণ আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই আলাদা আলাদা সম্ভাবনা আছে। তাই যদি আমরা আমাদের লক্ষকে স্থির করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। কাজেই শুধু পড়াশোনা না, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও এমন অনকে প্রফেশন আছে, যার যেদিকে আগ্রহ আমাকে চেষ্টা করতে হবে, সেটাকেই সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাহলেই আমরা সফল হবো। আর আমাদেরকে প্রকৃত অর্থে মানুষ হতে হবে। আমরা যদি প্রকৃত অর্থে মনুষত্ববোধ সম্পন্ন আলোকিত মানুষ হতে পারি, তাহলেই আমদের স্বার্থকতা আমাদের আজকের এই আয়োজনের স্বার্থকতা।

ফেস্টিভালের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল -টঘঋচঅ এর প্রোগ্রাম এসিস্ট্যান্ট- আবু নাসের বলেন, কেন বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে এতো বেশী। বিশেষ করে নারী এবং মেয়ে শিশুদের প্রতি সহিংসতা সেটা কেনো এতো বেশী। সেই কারণটা হচ্ছে যে, আমরা আমাদের মেয়েদেরকে-নারীদেরকে সমানভাবে পুরুষদের মতো, তাদের যে ইকুয়্যাল ক্যাপাবিলিটি, যে সম্ভাবনা, যে সামর্থ আছে সেভাবে দেখিনা এবং এই ধারণাটা যে শুধু পুরুষদের মধ্যে তা না, এটা আমাদের সামাজিকিকরণ যে প্রক্রিয়া সেটার কারণে আমাদের নারীদের মানসিকতার মধ্যেও অনেকটা গেঁথে দিই। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের আপনাদের যে ক্যাপাবিলিটি সেটা যাতে আপনারা ভালো করে জানতে পারেন, যে মানুষগুলো এখানে আজকে আপনাদেরকে কাউন্সিলিং দিচ্ছেন, ইনফরমেশন দিয়ে সমৃদ্ধ করছেন, প্রতিটি মানুষই কিন্তু আপনারা দেখবেন যে, উনারা কিন্তু খুব বেশী দূর থেকে আসেননি। উনারা সবাই আপনাদের সমাজের, আপনাদের আশেপাশের, আপনার-আমার মতোই মানুষ। উনারা যদি পারেন আপনাদের এই বাস্তবতা থেকে উঠে গিয়ে নিজেকে গড়তে পারেন, তাহলে আপনারা কেনো পারবেন না। জীবনে দেখবেন প্রচুর সফল মানুষ আছেন, শুধু এইসব সেক্টরেই আপনাদের সম্ভাবনাটা লিমিটেড না, এটা হচ্ছে যে একটা শুরু, যেখান থেকে আপনারা জানলেই কিভাবে আপনি কোথায় গিয়ে নিজের প্রতিভাকে তুলে ধরবেন। আপনারা একার থেকে জানলেন যে, সবাইকে যে শুদু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, রকেট সায়িন্টিস্ট হতে হবে এমনটা না, এমন হতে হবেনা। পৃথিবীতে অজস্্র প্রফেশন আছে, আপনার নিজের চাহিদা, নিজের যে ইচ্ছা, নিজের যে শক্তি, যে জায়গাটাতে আপনার সম্ভাবনা বেশী, সেই খানেই আপনি নিজেকে বিকশিত করতে পারবেন। আমরা আমাদের স্বপ্নের কথা কখনো খুলে বলিনা। আজকের এই আয়োজনের মূল লক্ষই হচ্ছেঝ, আমরা চাই আপনারা আপনাদের নিজের স্বপ্নের কথাটা জানুন, আরো ভালোভাবে ডিফাইন্ড করুন এবং আপনার পরিবারের যে মানুষ গুলোর সমর্থন আপনার সবথেকে বেশী দরকার, সেই সম্ভাবনার শিখরে পৌঁছানোর জন্য, সেই মানুষগুলোর সাথে কথা বলুন। আর আপনারা বাবা-মায়েরাও, শিক্ষকরা আপনারাও আপনাদের সন্তানের সেই সম্ভাবনাময় স্বপ্নটাকে পূরণ করতে সব্বোচ্চ সহযোগীতা করুন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাহিদা আখতার, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুবিনা আনিস সহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

উল্লেখ্য, “ক্যারিয়ার ফেস্টিভাল” বা “সম্ভাবনার উৎসব”-এ কিশোর-কিশোরী, অভিভাবক ও শিক্ষক সহ প্রায় ৬’শ নারী অংশগ্রহন করেন। এতে ২০ টি স্টলে প্রত্যেক অংশগ্রহনকারী তাদের ক্যারিয়ারের চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্যের গল্প শেয়ার করেন, যা অন্যান্য কিশোর-কিশোরীদের তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে দিক-নির্দেশনা দিয়ে অনুপ্রাণিত করবে।